রিনাই, রিসা, রাংবতাং সাজে দেবী দুর্গা

ত্রিপুরা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও গয়নায় দেবী দুর্গা। ছবি: নীরব চৌধুরী
ত্রিপুরা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও গয়নায় দেবী দুর্গা। ছবি: নীরব চৌধুরী

খাগড়াছড়ির খাগড়াপুর এলাকায় শ্রীশ্রী অখণ্ডমণ্ডলী পূজামণ্ডপ। মন্দিরে ঢুকতেই ডানে ফুলে ভরা একটি শিউলিগাছ। এর একটু দূরেই পূজামণ্ডপ। মণ্ডপে সিংহের ওপর দেবী দুর্গা আসীন। দশরথী দুর্গার পরনে শাড়ির পরিবর্তে ঐতিহ্যবাহী রিনাই ও রিসা। পায়ে নূপুরের বদলে বেংকি। গলায় রাংবতাং (পয়সা দিয়ে তৈরি এক ধরনের মালা) আর হাতে চুড়ির বদলে (বাংডিবাই)।

দেবীর ডান পাশে লক্ষ্মী ও কার্তিক, বাম পাশে সরস্বতী ও গণেশ। তাদের পরনেও ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার। দূর থেকে দেখেই মনে হয় দেবী স্বয়ং এসে উপস্থিত হয়েছেন পাহাড়ের পাদদেশে সন্তানদের নিয়ে। প্রবেশ থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত সবকিছুই পাহাড়িদের সংস্কৃতির আদলে এঁকেছেন প্রতিমাশিল্পী।
শুধু প্রতিমা নয়, প্রতিমার সঙ্গে মিলিয়ে মঞ্চসজ্জা করা হয়েছে পাহাড়ের আদলে। রয়েছে পাহাড়, ঝরনা, গাছ ও লতাপাতা।

প্রতিমা তৈরি থেকে সাজসজ্জার কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক ছাত্র সাপু ত্রিপুরা। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিজেদের গ্রামের দুর্গাপূজা, তাই চেয়েছি ভিন্ন কিছু করতে নিজের সবটুকু দিয়ে। ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মূলধারা বজায় রেখে মায়ের রূপ দিতে চেষ্টা করেছি। প্রতিমার সঙ্গে মিলিয়ে পাহাড়, ঝরনা, গাছ তৈরি করেছি। সব মিলিয়ে প্রকৃতির অবয়ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যে হারে দর্শনার্থী আসছেন এবং প্রশংসা করছেন, তাতে মনে হয় প্রতিমা তৈরি সার্থক হয়েছে।’

দেবী দুর্গার প্রতি ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: নীরব চৌধুরী
দেবী দুর্গার প্রতি ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: নীরব চৌধুরী

পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াপুর জেলা শহরের মধ্যে হলেও এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা এলাকা। তাই কমিটির সবাই মিলে আলোচনা করেছেন সাজে ভিন্নতা আনতে। দেবী দুর্গার আরেক নাম হচ্ছে ‘পার্বতী’। তাই নামের সঙ্গে মিল রেখেই প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, দেবী দুর্গা ত্রিপুরাদের সাজে আমাদের কাছে আসেন।’

ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী সাজের পূজার খবর ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বাইরেও। খাগড়াপুর এলাকায় খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের পূজামণ্ডপটিতে আজ শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের শতাধিক মানুষের ভিড় সকালবেলাতেই।

দেবী দুর্গার ডানে লক্ষ্মী ও কার্তিক, বাঁয়ে সরস্বতী ও গণেশ। তাদের পরনেও ত্রিপুরার পোশাক ও অলংকার। ছবি: নীরব চৌধুরী
দেবী দুর্গার ডানে লক্ষ্মী ও কার্তিক, বাঁয়ে সরস্বতী ও গণেশ। তাদের পরনেও ত্রিপুরার পোশাক ও অলংকার। ছবি: নীরব চৌধুরী

প্রতিমা মণ্ডপে কথা হয় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দা রানা দাশ, বিপ্লব সাহা ও শংকর সাহার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, খাগড়াছড়ি বাজারে বাজার করতে এসে শুনেছেন এই ভিন্ন ধরনের প্রতিমার কথা। তাই দেখতে এসেছেন।

মালতী দেবী ত্রিপুরা (৬৬) ও শেফালি রানী ত্রিপুরা (৬১) বলেন, প্রতিমাকে এমন ভাবে সাজানো যায়, তা তাঁদের কল্পনার বাইরে ছিল। ত্রিপুরা সাজে দেবীকে দর্শন করতে পেরে তাঁরা খুশি।

পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে, ভিন্ন সাজের প্রতিমার কারণে সন্ধ্যায় দর্শনার্থী বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার জন্য পূজামণ্ডপে জেলা প্রশাসনের দেওয়া নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি নিজেদের লোকও রাখা হবে।