'পুলিশের নাকের ডগায় ক্যাসিনো, পুলিশ বলছে জানে না'

শাহদীন মালিক
শাহদীন মালিক

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটির প্রশ্ন ও উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশ সরকার গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। গুমের ঘটনার দায় সরকারের। গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হবে না। প্রয়োজন আইনের শাসন। এখন যেভাবে দেশ চলছে তাতে সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়তে বাধ্য। দেশ এখন খাদের কিনারে। সামনে গভীর খাদ।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি ‘জোরপূর্বক গুম বিষয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা ও জাতিসংঘের সুপারিশ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যার মধ্য দিয়ে কোনো সমাজে অপরাধ দূর হয়নি। বরং পুরো সমাজ অপরাধপ্রবণ হয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়ার ফল কী তার বড় উদাহরণ হলো মধ্য আমেরিকার দেশগুলো। তিনি বলেন, যেভাবে চলছে তাতে সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়তে বাধ্য। পুলিশের নাকের ডগায় ক্যাসিনো চলছে আর পুলিশ বলছে তারা জানে না। সমাজের পচন শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের মধ্য দিয়ে। ৪০০-৫০০ মানুষ মেরে ফেললে সমস্যা সমাধান হয়ে যায় না। আইন থাকবে না, বিচার থাকবে না, এ ধরনের একটি সমাজের দিকে দেশ এগিয়ে চলছে।

শাহদীন মালিক বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আমলাদের অবসরোত্তর ‘হোম’ হয়ে গেছে। আমলারা সব সময় নির্দেশিত হয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত হন। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা খুব একটা তৈরি হয় না। নতুন কমিশনের কাছে আগামী তিন বছরে কোনো প্রত্যাশা নেই। তাঁরা আরামে থাক, সুখে থাক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, গুমের অপরাধের দায় সরকারের। বেশির ভাগ গুম যদি সরকার না করে থাকে তাহলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা র‍্যাব-পুলিশের নাম বলে কেন? কেন গুমের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয় না? মামলা নিলেও গড়িমসি কেন, অগ্রগতি হয় না কেন? যাঁরা ফিরে আসেন তাঁরা মুখে তালা দেন কেন? পুলিশ কেন জানতে চায় না—গুম হওয়া ব্যক্তিরা কোথায় ছিলেন। সুতরাং বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, বেশির ভাগ গুমের ঘটনায় সরকার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জড়িত। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র—অনেক কিছুই গুম হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যত আলোচনা সব অরণ্যে রোদন। যাদের এসব ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা সেই সরকার কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে অস্বীকার করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। গুমকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতেরও করণীয় আছে।

নারী অধিকার কর্মী শিরিন হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটির প্রশ্ন ও উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশ সরকার গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে সরকারকে বিব্রত করার জন্য বা ব্যক্তিগত কারণে অপহরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগীয় তদন্ত ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার বিচারের উদাহরণ টেনে সরকার তাদের সোচ্চার ভূমিকা তুলে ধরার চেষ্টা করলেও তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। বাস্তবতা হলো অত্যন্ত আলোচিত ঘটনা, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা, আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া অধিকাংশ গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনায় কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।