পঞ্চগড়ে বাসচাপায় প্রাণ গেল ৬ বছরের শিশুর

সড়ক দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চাপায় রিশা আক্তার (৬) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক শিশু নিহত হয়েছে। এ সময় মোটরসাইকেলচালক রবিউল ইসলাম ও সাত বাসযাত্রী আহত হয়েছেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের সাতমেরা এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত রিশা আক্তার ওই এলাকার পাথর ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের (৩৫) মেয়ে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন সাতমেরা এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা সেখানে একটি গতিরোধক স্থাপনের দাবি করে। পরে তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানা-পুলিশ ও তেঁতুলিয়া মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নিহত শিশু রিশা আক্তার স্থানীয় ভজনপুর ইসলামিয়া নুরানী কিন্ডার গার্টেনে পড়ত। সকালে কিন্ডার গার্টেন ছুটি হলে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক দিয়ে মোটর সাইকেলযোগে শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তার বাবা। এ সময় সাতমেরা এলাকায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড়গামী আর ইসলাম নামে একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে চাপা দেয়। এতে শিশু রিশা আক্তার ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং রবিউল ইসলাম গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত রবিউলকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) স্থানান্তর করা হয়।

ঘটনার সময় বাসটি চাপা দেওয়া মোটরসাইকেলটিকে প্রায় এক কিলোমিটার ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। পরে বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে মাগুরমারী চৌরাস্তা এলাকায় এসে বাসটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় সাত বাসযাত্রী আহত হয়। আহত বাসযাত্রীরা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন (৪০), সালেহা (৩০), মো. রিপন (২৫), আব্দুল্লাহ (৪০) সোহরাফ হোসেন (৪০), আব্বাস আলী (৩২) ও আয়শা (২৬)। আহত বাসযাত্রীদের স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আহত বাসযাত্রীদের বেশির ভাগই পাথর শ্রমিক বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনায় আহত বাসযাত্রী মো. রিপন বলেন, ‘সকালে আমরা কয়েকজন বুড়াবুড়ি এলাকা থেকে ওই বাসটিতে উঠি। চালক দ্রুত গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। সাতমেরা এলাকায় এসে বাসটি একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। আমরা চালককে থামাতে বলি কিন্তু তিনি না থামিয়ে দ্রুত গতিতে চালাতে থাকেন। পরে বাসটির বাম্পারের সঙ্গে মোটরসাইকেলটি লেগে থাকায় প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।’

আহত অপর যাত্রী আব্বাস আলী বলেন, ‘শুরু থেকেই বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। মোটরসাইকেল চাপা দেওয়ার পর সবাই থামাতে বললেও তিনি থামাননি। পরে বাসটি খাদে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চালক পালিয়ে যায়, আর আমরা আহত হই।’

তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ-হেল-বাকী বলেন, বাসচাপায় ওই শিশুটি মারা যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নিহত শিশুটির লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই বাসচালক পালিয়ে গেছে। তবে বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।