বুয়েটে ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধ চান শিক্ষার্থীরা

আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: আবদুস সালাম
আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: আবদুস সালাম

মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) জড়ো হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে মিছিল বের করেছেন তাঁরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরছে।

‘আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চাই’-ব্যানারে এই মিছিল বের করেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। এর আগে মিছিল পূর্ববর্তী জমায়েতে বেশ কিছু দাবি জানান তাঁরা।

দাবিগুলো হলো:

আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে, ভিসি ঘটনার পর একবারও আসেননি, তাঁকে আজ বিকেলের মধ্যে বুয়েটে আসতে হবে; শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে আসতে হবে এবং ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে; হলগুলোতে র‌্যাগিংয়ের নামে ভিন্ন মতের ছাত্রদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়, তা বন্ধ করতে হবে; র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; আবরার হত্যাকাণ্ডের যারা জড়িত, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; আহসানুল্লাহ হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় জড়িত ছাত্রদের আগামী ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে বহিস্কার করতে হবে; আবরারের পরিবারের সকল খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে ও বুয়েটের ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ঘুরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে থামবে। তিনি এসে জবাবদিহি করবেন, তারপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

আজ সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। তবে পকেট গেট দিয়ে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকেরা ভেতরে ঢোকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দরজা খুলে দেওয়া হয়।

দুর্গাপূজা উপলক্ষ বুয়েটের সমস্ত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে হত্যার প্রতিবাদ জানাতে সকাল থেকেই বুয়েটে ক্যাম্পাসে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

গত রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

গতকাল সোমবার আবরার হত্যার প্রতিবাদে দিনভরই উত্তপ্ত ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। গতকাল দুপুর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁরা হলের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা রোববার রাতের ফুটেজ দেখানোর এবং দোষী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।