ছাত্রলীগ-যুবলীগের এত প্রতিযোগিতা কেন, প্রশ্ন অর্থমন্ত্রীর

আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি
আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, এখন যারা ছাত্রলীগ করে, যুবলীগ করে তাঁদের কিসের এত তাড়া? তাঁদের মধ্যে এত প্রতিযোগিতা কেন? অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য, দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য?

আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ষোলোশহর এলাকায় অবস্থিত এলজিইডি মিলনায়তনে এক স্মরণসভায় এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভায় প্রয়াত কায়সারের মেয়ে ও সাংসদ ওয়াশিকা আয়েশা খানও বক্তব্য দেন।

অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘তোমরা সফল হবে না। সফল হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সফল হবেন বঙ্গবন্ধু। সফল হবে দেশপ্রেমে বিশ্বাস করা নেতা-কর্মীরা।’
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা ঠকবেন না। গত ১০ বছরে যা করেছি, আগামী ৫ বছরে তার চেয়ে বেশি করা হবে। আমি এখনো চট্টগ্রাম বিভাগে আছি। আর পড়াশোনাও এখানে করেছি। এখানে গানও গাইব।
অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল সতর্ক করে বলেন, আমরা এখনো অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কোথাও একটা মিস ম্যাচ (অমীমাংসা) দেখা যাচ্ছে। যেটা হওয়া উচিত ছিল না, সেটাই আমরা দেখতে পারছি। কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, আমাদের অস্থিরতার দিন কেটে যাবে।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল বলেন, যারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করে তাদের অনেক দায়িত্ব। কারণ এই দলের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই তাঁদের কর্মকাণ্ডের জন্য যেন কোনো বিতর্ক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের কাজ করতে হবে হিসাব কষে। পা ফেলতে হবে বুঝেশুনে। আমিও ছাত্রলীগ করতাম। আমার নামে কোনো বিতর্ক নেই। আমি টিউশন করে লেখাপড়া করেছি। আমার কোনো টাকা পয়সা ছিল না। সে জায়গা থেকে আমি আজ অর্থমন্ত্রী হয়েছি।

অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা জন্য। আজকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। সারা বিশ্বের কাছে আজ আমরা অনুকরণের জায়গায়। আইএমএফ সেটা বলছে, বিশ্বব্যাংকও একই কথা বলছে। বাংলাদেশ আজ অনুপ্রেরণার জায়গা। কারণ, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে অনেক এগিয়ে গেছে। এই চট্টগ্রামের জন্যও অসংখ্য প্রকল্প দিয়েছি। কিন্তু সেসব কাজ হয়নি। আজকে এই জন্য আমার মন খুব খারাপ। আমি দেখতে পেয়েছি প্রকল্পগুলো ‘আনটাচ’ রয়ে গেছে।

দেশের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বের অনেক দেশকে আমরা পেছনে ফেলেছি। এখন আমাদের সামনে চীন ও ভারত। আর সবাইকে পেছনে ফেলেছি। পৃথিবীর অর্থনীতিতে আমাদের অবস্থান এখন ৩০ তম। ২০২৮ সালে আমরা ২৭ নম্বরে পৌঁছাব। ১৯৩ দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান যদি ২৭ তম হয় তবে সেটি অনেক গর্বের। এখন আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট ও স্থির। এখন সেসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রয়াত আতাউর রহমান খান সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি যে আদর্শে রাজনীতি করতেন, জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতেন, প্রধানমন্ত্রী যে রাজনীতি করেন-আমরা সে পথ থেকে এখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি। আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা এখনো বেঁচে আছি। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা এখনো বেঁচে আছি। আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যু নেই। তিনি ক্ষণজন্মা মানুষ। সব সময় দেশের স্বার্থে কাজ করেছেন। দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর স্মৃতি ও আদর্শ এখনো আমাদের সঙ্গে আছে।