৬ তলা ভবন পড়ে আছে ৬ মাস, রোগীরা মেঝেতে

শয্যাসংকটের কারণে মেঝেতে ঠাঁই নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। সম্প্রতি নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে।  ছবি:  প্রথম আলো
শয্যাসংকটের কারণে মেঝেতে ঠাঁই নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। সম্প্রতি নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে। ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ছয়তলার একটি আধুনিক ভবন ছয় মাস ধরে পড়ে আছে। অথচ শয্যাসংকটের কারণে ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝে ঠাঁই নিয়ে দিনের পর দিন চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রোগীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় অর্থ ও জনবলের অভাবে ভবনটি চালু করা যাচ্ছে না।

ছয়তলার নতুন ভবনটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ছয় মাস আগে ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু না করায় সুফল পাচ্ছেন না রোগীরা। গাদাগাদি করে পুরোনো ভবনে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাঁরা।

নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ১০০ শয্যার হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। সেটি প্রায় ছয় মাস আগে হস্তান্তর হলেও এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যমান ১০০ শয্যার তুলনায় প্রতিনিয়ত অনেক বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসাসেবায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শয্যাসংকটের কারণে অনেকে বারান্দায় আশ্রয় নিচ্ছেন। দুর্ভোগ লাঘবে নতুন ভবনটি দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে ২৯০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ১০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ জন, ২৫ শয্যার পুরুষ ওয়ার্ডে ৬২ জন, ২৫ শয্যার মহিলা ওয়ার্ডে ৯৭ জন, ৫ শয্যার নবজাতক ওয়ার্ডে ১৬ জন, ১৫ শয্যার প্রসূতি ওয়ার্ডে ৩৭ জন ও ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩৩ জন ছিলেন। ১০ শয্যার চক্ষু বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় সেটি বন্ধ। গত মঙ্গলবার এখানে ৩৪৫ জন ও আগের দিন সোমবার ৩০১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দায় কথা হয় সদর উপজেলার ইটাপীড় গ্রামের আব্বাস আলীর (৬৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়ে দুই দিন ধরে বারান্দায় আছি। বিছানাও খালি নেই, ওয়ার্ডের ভেতরেও জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে।’

হস্তান্তরের ছয় মাস পরও পড়ে আছে ছয়তলা ভবন।  ছবি: প্রথম আলো
হস্তান্তরের ছয় মাস পরও পড়ে আছে ছয়তলা ভবন। ছবি: প্রথম আলো

মহিলা ওয়ার্ডের মেঝে থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন একই উপজেলার চেংমারী গ্রামের ইসমত আরা বেগম (৩৫)। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে মেঝেতে আছি, তারপরও বিছানা পাচ্ছি না।’ একই ওয়ার্ডের মেঝে চিকিৎসাধীন নীলফামারী পৌরসভার হাড়োয়া মহল্লার হাসিনা বেগম (৫৫)। তিনি বলেন, ‘মেলা দিন থাকি শুনেছি নয়া বিল্ডিং হইছে, মানুষ অনেক কষ্ট করেছে, তা–ও চালু করে না।’

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রমতে, ১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২০১১ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীতের ঘোষণা হয়। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যার সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। আটতলা ভিত্তির ভবনটির ছয়তলার নির্মাণকাজে সময় লাগে প্রায় ছয় বছর। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে গণপূর্ত বিভাগ। এরপর ২৫০ শয্যার জন্য জনবল ও অর্থ বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। তা না পাওয়ায় এখনো কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে আরও জানা যায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য চিকিৎসকসহ জনবল প্রয়োজন ২২০ জন। ১০০ শয্যার হাসপাতালে জনবল প্রয়োজন ১৫০ জন। ৫০ শয্যায় প্রয়োজন ১৩০ জন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে দফায় দফায় ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও পুরোনো ৫০ শয্যার জনবলের কাঠামোই রয়ে গেছে। এর মধ্যেও ৯ জন চিকিৎসকসহ জনবলের ঘাটতি রয়েছে ২৩ জনের।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন রণজিৎ কুমার বর্মণ বলেন, ‘২৫০ শয্যার কার্যক্রম দ্রুত চালুর জন্য জনবল ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠিয়েছি।’