এই আপনার আদর্শ: প্রধানমন্ত্রীকে ড. কামাল

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ ও শোক র‍্যালি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তার আগে প্রেসক্লাবে বক্তৃতা করেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১৩ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ ও শোক র‍্যালি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তার আগে প্রেসক্লাবে বক্তৃতা করেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১৩ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম

যিনি দেশ শাসন করছেন, বুয়েটে নিহত আবরার ফাহাদের হত্যাকারীরা তাঁর অনুসারী বলে উল্লেখ করেছেন গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘এই আপনার (প্রধানমন্ত্রী) আদর্শ?’ ড. কামাল প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আবরার হত্যার প্রতিবাদে নাগরিক সভা ও শোক র‌্যালির আয়োজনে কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আবরারকে যারা হত্যা করল, এরা কার আদর্শের অনুসারী? যিনি দেশ শাসন করছেন। এই আপনার আদর্শ? তা যদি হয়ে থাকে, আপনার তো এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকা উচিত না।’ তিনি আরও বলেন, সবার চাওয়া প্রধানমন্ত্রী যেন দেশ শাসন করা থেকে সরে দাঁড়ান। সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আবরার কী অন্যায় করেছিল। এটা সংবিধানের ওপর আঘাত।

আবরারের হত্যাকারীরা পশু উল্লেখ করে গণফোরামের সভাপতি বলেন, ‘ছেলেদের আপনারা পশু বানাচ্ছেন কেন? এই বাংলার ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, এরা সাহসী ছিল। এদের বানাচ্ছেন পশু। এই ছেলেদের যদি দেশ গড়ার কর্মী হিসেবে লালন করা হয়, তারা দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে। কিন্তু তা না করে হত্যাকারী বানাচ্ছেন।’ ছেলেদের যারা পশু বানাচ্ছে, তাদের বিচার করা হবে বলে তিনি জানান। রাষ্ট্রক্ষমতার প্রশ্রয় দিয়ে পশু বানানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।

কামাল হোসেন বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যে সরকারি দল আছে, শাসন করছে, এই দলে তো আমরা সবাই ছিলাম। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে। সেই দলের নাম নিয়ে যা হচ্ছে তাতে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে। কী আশ্চর্য ব্যাপার। সামান্যতম দায়িত্ব বোধ হবে না, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশকে?’

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অধিকারকে বন্দুক আর পুলিশ দিয়ে বঞ্চিত করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, ‘সময় থাকতে মাথা ঠান্ডা করে দেশকে আপনার কুশাসন থেকে মুক্ত করেন। যথেষ্ট হয়েছে। আর কত!’

৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দেব তৃতীয়বার আপনাকে কেউ নির্বাচিত করে নাই। আপনি স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনি দ্রুত সরে যান। নির্বাচন ঘোষণা করেন। এগুলো দলীয় কোনো চাওয়া নয়; সংবিধানের দাবি।’

সভায় জানানো হয়, ১৮ অক্টোবর ঢাকায় উন্মুক্ত কোনো স্থানে আবরারের নিহতের ঘটনায় শোকসভা হবে। এ ছাড়া আবরারের কবর জিয়ারত করতেও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যাবেন বলে জানানো হয়, তবে কোনো তারিখ উল্লেখ করেনি এই জোট।

কদম ফোয়ারার সামনে শোক র‍্যালিটিকে আটকে দেয় পুলিশ। ঢাকা, ১৩ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম
কদম ফোয়ারার সামনে শোক র‍্যালিটিকে আটকে দেয় পুলিশ। ঢাকা, ১৩ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব দাবি করেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ প্রথম ছাত্র হত্যা শুরু করে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় করা হয়েছে, সরকারকেও এভাবে বিদায় করা হবে।

সরকার ভয় পেয়ে বিরোধী মতকে ধমকাচ্ছে অভিযোগ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ধমকালেও তাঁরা মাথা নত করবেন না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকলে আবরার মরত না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার ও হলের দখলদারি বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আবরারের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে রাজপথে নামতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের কেন্দ্রের একাধিক নেতা উপস্থিত থাকলেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আর কেউ সমাবেশে ছিলেন না।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশে একটি শোক র‌্যালি বের করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে প্রেসক্লাব থেকে কয়েক কদম এগোনোর পরই পুলিশ তাঁদের বাবা দেয়। পরে আ স ম আবদুর রব সেখানে এর নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এই বাধার প্রতিবাদে ২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্ট সমাবেশ করবে।