নাব্যতা-সংকটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথ ফেরি চলাচল বন্ধ

পদ্মা নদীতে নাব্যতা–সংকটে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুর শিবচরের কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

নাব্যতা–সংকটের কারণে রোববার দুপুর দুইটা থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত এ পথে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে।

বিআইডব্লিউটিসি বলছে, বিআইডব্লিউটিএর গাফিলতির কারণে নদীতে ড্রেজিং হচ্ছে না। এ জন্য ফেরি চলাচলও সচল করা যাচ্ছে না। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, নদীতে তাদের খনন কাজ চলছে।

শিমুলিয়া ঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক মাস ধরে নাব্যতা–সংকট ও স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। এ কারণে অর্ধেকের বেশি ফেরি প্রায় বন্ধ রাখতে হতো। রোববার সকাল থেকে নৌ চ্যানেলে নাব্যতা–সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। একই সঙ্গে মূল নদীতে ছিল তীব্র স্রোত। এতে চ্যানেলের মুখ দিয়ে ফেরি ঢুকতে পারছিল না। দুপুর দুইটা থেকে নাব্যতা–সংকট প্রকট হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে ঘাটে আটকা পড়েছে পাঁচ শতাধিক যানবাহন। চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এ পথের যাত্রী ও চালকেরা।

হা–মীম পরিবহনের চালক আনু মোল্লা বলেন, ‘ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে সোমবার ভোরে ঘাটে আসি। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছি। ফেরি চলাচল শুরু না হওয়ায় যাত্রীরা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়েন। দুপুরের দিকে তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে চলে গেছেন।’

আনু মোল্লা বলেন, ফেরিঘাটে বিলম্বের কারণে ঈদের পর থেকে এভাবে যাত্রী চলে যাওয়ার ঘটনা তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে চারবার ঘটেছে।

ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রী হৃদয় হাসান সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বলেন, তিনি রাজধানীর মতিঝিল থেকে যশোরে যাওয়ার জন্য সকাল ১০টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে আসেন। ফেরি বন্ধ থাকায় যানজটে আটকা পড়েছেন।

আক্ষেপের সঙ্গে হৃদয় বলেন, ‘কোরবানি ঈদের আগে থেকে নাব্যতা–সংকটের কথা শুনছি। ঘাটে এসে প্রায় ফেরি বন্ধ পাচ্ছি। অথচ কর্তৃপক্ষ সংকট সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

ট্রাকচালক মো. নবাব আলী জানান, ঢাকার রূপসী থেকে তেল, আটা, সুজি নিয়ে এক সপ্তাহ আগে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন। যাবেন মাদারীপুর। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এখনো নদীপাড়ে অপেক্ষায় আছেন।

নবাব আলী বলেন, গত কয়েক দিন ঘাটের অন্য গাড়িগুলো ফেরিতে পার হতে পারলেও ট্রাকগুলো আটকে আছে। যেকোনো উৎসব, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ট্রাকচালকদেরই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে পাঁচ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাস, ছোট গাড়ি ও মালবাহী ট্রাক আছে। তবে ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, এক সপ্তাহ ধরে ঘাটে আটকে আছে এমন অনেক ট্রাক আছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আলীমুজ্জামান বলেন, একটি ফেরি চলতে কমপক্ষে ৭ ফুট পানি দরকার। সেখানে পানি আছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট।

আলীমুজ্জামান বলেন, লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্যতা–সংকট দেখা দেওয়ায় গত কোরবানি ঈদের আগে ওই চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। লৌহজংয়ের সোজা চ্যানেল দিয়েই চলছিল ফেরি। নাব্যতা-সংকটের জন্য প্রায় প্রতিদিনই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। রোববার সকাল থেকে ফেরি চালাতে গেলেই মাটির সঙ্গে আটকে যাচ্ছিল। তাই ওই দিনদুপুর থেকে জানমালের নিরাপত্তার জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ‘চ্যানেল মুখে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ খননযন্ত্র বসিয়েছে। এক মাস ধরে আমাদের জানানো হচ্ছে। শিগগিরই তাঁদের খননকাজ শেষ হবে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অথচ বিআইডব্লিউটিএ কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের গাফিলতির কারণে এ পথের যাত্রীরা প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছে।’

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকল্প চ্যানেলটি সচল করার জন্য দীর্ঘদিন খনন করেছি। নদীতে পলির মাত্রা বেশি হওয়ায় তেমন কাজে আসেনি। তাই সোজা চ্যানেলটি আবারও খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাঁচটি খননযন্ত্র বসানো হয়েছে।’