শীত না নামতেই বাতাস অস্বাস্থ্যকর

ধুলায় আচ্ছন্ন সড়ক। দূষিত হচ্ছে বায়ু। শীতের আগেই এবার রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। গত রোববার পশ্চিম আগারগঁাও শেরেবাংলা নগর এলাকায়।  ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
ধুলায় আচ্ছন্ন সড়ক। দূষিত হচ্ছে বায়ু। শীতের আগেই এবার রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। গত রোববার পশ্চিম আগারগঁাও শেরেবাংলা নগর এলাকায়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। শীত এগিয়ে আসছে, তাপমাত্রাও কমছে। রাজধানীর চারপাশের ইটভাটাগুলো চালু হয়েছে। নির্মাণকাজও বাড়ছে। আর এতেই রাজধানীর বাতাসে দূষণ বাড়তে শুরু করেছে। খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, রাজধানীর বাতাস দুই দিন ধরে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। তবে রাজধানীর চেয়েও খারাপ অবস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলার। সেখানকার বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ ঢাকার চেয়েও বেশি। 

অন্যদিকে বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ বলছে, বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বায়ুতে দূষণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। গতকাল সোমবার বিকেলেও বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম। ওই তালিকার শীর্ষ চারটি শহর ছিল যথাক্রমে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, মঙ্গোলিয়ার রাজধানীর ওলানবাটর, পাকিস্তানের করাচি ও কুয়েত সিটি। আর ঢাকার পর ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে কলকাতা শহর। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সময়ে ইটভাটাগুলো চালু হওয়ায় এবং বিভিন্ন নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় বায়ুদূষণ বাড়তে থাকে। বায়ুদূষণ বন্ধ করতে এবার আমরা ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। যেসব বড় অবকাঠামোর কারণে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে, তাদের ব্যাপারেও আমরা এবার আগাম ব্যবস্থা নেব।’ 

>সাধারণত নভেম্বর থেকে ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর হয়
এবার অক্টোবরেই বায়ু অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যায়, গত চার বছর ধারাবাহিকভাবে দূষণের সময় বা দিন বাড়ছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বেশি দূষণ থাকে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মার্চ ও এপ্রিলের বাতাসও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মতো খারাপ থাকছে। এর আগে এপ্রিলে এসে বাতাসের মান মোটামুটি ভালো অবস্থায় ফিরত। কিন্তু গত বছরের এপ্রিল মাসেও রাজধানীর বাতাস খুবই খারাপ ছিল। 

কিন্তু চলতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হতে না হতেই ঢাকার বায়ু দূষিত হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বায়ু দূষিত হওয়া ছাড়াও ময়মনসিংহ ও রংপুরের বাতাসও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা ও গাজীপুরের বাতাস মাঝারি মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে। 

পরিবেশ গবেষক আতিক আহসানের একটি চলমান গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ১৬৫ দিন রাজধানীর বায়ু অস্বাস্থ্যকর থেকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর ছিল। ২০১৫ সালে তা বেড়ে ১৭৩ দিন, ২০১৬ সালে ১২৯ দিন, ২০১৭ সালে ১৮৫ দিন ও ২০১৮ সালে ১৯৭ দিন ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে প্রতিদিন ঢাকার বায়ুর মান পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আতিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের সময়কাল যেভাবে বাড়ছে, তাতে শহরে রোগব্যাধির প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। এখনই বায়ু অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠলে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাতাস আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। ফলে এখন থেকে বিষয়টিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।