যশোরে ১০০০ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ

যশোর
যশোর

বেতনবৈষম্য কমানোর দাবিতে যশোর জেলার সহস্রাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার বেলা একটা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক মডেল টেস্ট (নির্বাচনী) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে পাঠদান না হওয়ায় অভিভাবকের চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবিতে শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ওই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। প্রতিবাদে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয়। কর্মসূচি অনুযায়ী গত সোমবার সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ও গতকাল বুধবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। 

বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পাঠদান না করে বসে থাকছেন। পাঠদান না হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। যারা যাচ্ছে তারা বিদ্যালয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। খেলাধুলা করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। 

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার আগ মুহূর্তে পাঠদান বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পাঠদানে ধারাবাহিকতা না থাকায় লেখাপড়ায়ও শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশ নষ্ট হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ যশোর জেলা শাখার সদস্যসচিব গাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আমরা অস্বীকার করি না। তবে একই যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও দেশের অন্য সরকারি বিভাগের কর্মকর্তাদের তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বেতন-ভাতার চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যে কারণে আন্দোলনে না গিয়ে আমাদের কোনো উপায়ও নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘সরকারের কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ভূমি বিভাগের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত ও পেশাগত প্রশিক্ষণ একই হওয়া সত্ত্বেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন হয় তাঁদের পাঁচ ধাপ নিচে। এই বৈষম্য বিলোপ করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। যার প্রতিবাদে প্রাথমিকভাবে চার দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ 

শিক্ষকেরা জানান, ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণের পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তিনটি গ্রেডে বেতন দেওয়া হতো। সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে পার্থক্য ছিল দুইটি গ্রেডে। ১৯৭৭ সালের পে-স্কেল থেকে ২০০৫ সালের পে-স্কেল পর্যন্ত চারটি গ্রেডে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। এতে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে দুইটি গ্রেড থেকে তিনটি হয়। ২০০৬ সালের জুন থেকে বেতন বৃদ্ধি করা হলেও সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকের মধ্যে পার্থক্য তিন গ্রেডে রয়েই যায়। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে নতুন করে বেতন স্কেল নির্ধারণের ফলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিকদের বেতন স্কেলের পার্থক্য বেড়ে যায়। পার্থক্য হয় চারটি গ্রেডে। ফলে সহকারী শিক্ষকেরা বেতন স্কেলের দিক থেকে আরও পিছিয়ে পড়েন এবং বৈষম্য বেড়ে যায়। 

বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে, প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক ১২তম গ্রেডে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন সহকারি শিক্ষক ১৫তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। 

শিক্ষক নেতারা বলেন, গ্রেড বৈষম্য কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের। সরকার বারবার এ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে অঙ্গীকার করেন। শিক্ষক নেতারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।