বউকে ফাঁসাতে ছেলে অপহরণ, ধরা খেলেন স্বামী

আজিজুর রহমান ওরফে হেকমত আলীর (৫৩) দুই বউ। দুই ঘরে সব মিলে তাঁর সন্তান ১৪ জন। এমন বড় সংসার নিয়ে বেকায়দায় আছেন আজিজুর। দুই বউয়ে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে। এ নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছে। এক বউয়ের মামলায় আজিজুর নিজেও আসামি।

এবার ছোট বউয়ের পরামর্শে বড় বউকে ফাঁসাতে নিজের ছেলেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ধরা খেয়েছেন আজিজুর। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে আজিজুর রহমানের বাড়ি। তাঁর বড় স্ত্রীর নাম জামিনা বেগম। এই বউয়ের ঘরে ছেলেমেয়ে পাঁচজন। দ্বিতীয় স্ত্রী লিপিয়া বেগমের সন্তান নয়জন।

আজিজুর রহমানের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, দুই বউয়ের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। তাঁরা একসঙ্গে থাকতে চান না। এক বউ আরেক বউয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। দুই বউ আর সন্তানদের ঝগড়া-ফ্যাসাদ সামলাতে না পেরে বড় বউকে আলাদা বাড়িতে রাখেন আজিজুর। আর ছোট বউয়ের সঙ্গে থাকেন তিনি। বড় বউ জামিনার করা মামলায় ছোট বউ লিপিয়ার ছেলে মনির মিয়া কারাগারে আছেন। তাই জামিনাকে শায়েস্তা করার চেষ্টায় ছিলেন লিপিয়া। এ ঘটনায় জামিনাকে হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে লিপিয়া তাঁর স্বামী আজিজুরকে দিয়ে ছেলে রিমন মিয়াকে (১০) অপহরণের নাটক সাজান। এরপর ৮ অক্টোবর আজিজুর বাদী হয়ে জামিনা বেগম ও তাঁর ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে রিমন মিয়াকে অপহরণের অভিযোগে তাহিরপুর থানায় মামলা করতে যান। এ বিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় এতে বাদ সাধেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি ঘটনা শুনে তাহিরপুর থানার পুলিশকে মামলা নিতে নিষেধ করেন। এরপর রিমনকে উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দেন। পরে গতকাল বুধবার পুলিশ রিমন মিয়াকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া রিমন আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানকে জানায়, সে অপহৃত হয়নি। ভৈরবে তার খালার বাড়িতে ছিল। তাহিরপুর থেকে তার বাবা তাকে সুনামগঞ্জ শহরের এনে খালুর কাছে দেন। পরে তার খালু তাকে ভৈরবে নিয়ে যান।

এ ঘটনায় আজিজুর রহমানকে আটক করতে তাহিরপুর থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। আটকের পর আজ দুপুরে তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনতাসির হাসান তাঁকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আজিজুর রহমান ওরফে হেকমত আলী কোনো কাজ করেন না। এলাকায় মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। অপহরণের মামলা নিলে আজিজুর নিচে বাঁচতে শিশুটির বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারতেন।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান জানান, ছেলেকে নিয়ে অপহরণের নাটক সাজানোর অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে আজিজুরকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।