কাউন্সিলর রাজীব গ্রেপ্তার সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির অভিযোগে: র‍্যাব

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা  থেকে গতকাল রাতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজীবকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।  ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গতকাল রাতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজীবকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীবকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল শনিবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

এ নিয়ে গত ১০ দিনের ব্যবধানে ঢাকা উত্তর সিটির মোহাম্মদপুর এলাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করল র‍্যাব।

রাজীব ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আবার ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

র‍্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরোয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই আত্মগোপনে ছিলেন রাজীব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

র‍্যাবের একটি সূত্র জানায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৪০৪ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলায় এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন রাজীব। গতকাল রাত পৌনে নয়টার দিকে র‍্যাবের একটি দল ওই বাসায় যায়। র‍্যাবের সশস্ত্র সদস্যরা বাসার সামনে অবস্থান নেন।

১০ অক্টোবর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় শ্রীমঙ্গল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছিল র‍্যাব। এর আগে ৭ অক্টোবর রাতে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডে মিজানের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‍্যাব। পরে লালমাটিয়ায় তাঁর কার্যালয়েও অভিযান চালানো হয়। র‍্যাব-২-এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ তখন বলেছিলেন, মিজানের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ব্যবসাসহ যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেই মামলাগুলোর নথিপত্র নিয়ে তাঁরা পর্যালোচনা করবেন। আর জেনেভা ক্যাম্পে তাঁর মাদকের কারবারের অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট।

মিজান গ্রেপ্তারের পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন রাজীব। কয়েক দিন ধরেই তাঁর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি নিজ কার্যালয়েও যাচ্ছিলেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাজীব তাঁর দুটি অস্ত্র থানায় জমা দিয়েছিলেন।

রাজীবকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাত সোয়া একটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র‍্যাবের মুখপাত্র সরোয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, রাজীবকে গ্রেপ্তারের সময় একটি অবৈধ পিস্তল, পাসপোর্ট, ৩৫ হাজার টাকা, বিদেশি মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে। তাঁর মোহাম্মদপুরের বাসা ও কার্যালয়েও অভিযান চালানো হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সরোয়ার বিন কাশেম বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সঙ্গে রাজীবের গ্রেপ্তারের সম্পর্ক নেই।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ‘শুদ্ধি’ অভিযান শুরু হয়। ২২টি ক্লাব, ৫টি বার, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৮ নেতার বাসা ও প্রতিষ্ঠানে ৪৫টি অভিযান চালানো হয়। ঢাকায় ২২০ জন ও ঢাকার বাইরে থেকে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম। তবে পরে তাঁদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।