রেবেকার সংগ্রামী জীবন

পাইকারি দরে সবজি কিনে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারেও বিক্রি করেন রেবেকা। গতকাল মাগুরা সদরের শিবরামপুরে।   ছবি: প্রথম আলো
পাইকারি দরে সবজি কিনে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারেও বিক্রি করেন রেবেকা। গতকাল মাগুরা সদরের শিবরামপুরে। ছবি: প্রথম আলো

২৮ বছরের সংসার রেবেকা বেগমের। স্বামী আবদুল হালিম কাজ করতেন যাত্রীবাহী পরিবহনের সুপারভাইজার হিসেবে। এরও আগে হালিম ছিলেন প্রবাসে। তখন সংসার ছিল সচ্ছল।

দুই বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হালিম গুরুতর আহত হন। সংসারে নেমে আসে দারিদ্র্য। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তখন ভর করে রেবেকার কাঁধে। সেই চ্যালেঞ্জ সাহসের সঙ্গেই মোকাবিলা করে চলেছেন মাগুরার এই নারী।

এখন রেবেকার দিন শুরু হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রেবেকা ছোটেন সবজিখেতে। পাইকারি দরে কেনেন লাউ, কপি, কুমড়া, পেঁপেসহ নানা রকম সবজি। সপ্তাহে দুই দিন শহরের নতুন বাজার হাটে এগুলো বিক্রি করেন তিনি। তাঁর মতো অনেক নারীই অবশ্য মাগুরার বিভিন্ন বাজারে দোকানদারি করেন। কিন্তু তাঁর বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে মিনিট্রাক বোঝাই করে সবজি নিয়ে তিনি যান ঢাকার মিরপুর, স্লুইসগেট, আবদুল্লাহপুর ও গাজীপুর কাঁচাবাজারে। আর দশজন পুরুষের মতোই পাইকারের এই কাজটি দুই বছর ধরে সফলভাবে করছেন এই নারী।

রেবেকা বলেন, তাঁর বাবার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল পলিতা গ্রামে। ২৮ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয় সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার সুবেদ বাজারের হালিমের সঙ্গে। তাঁদের সংসারে রয়েছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বিয়ের পর দীর্ঘদিন স্বামীর বাড়িতে সংসার করেন তিনি। দুই বছর আগে ফরিদপুরের কানাইপুরে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রায় অচল হয়ে পড়েন পরিবহনশ্রমিক স্বামী হালিম। সেই থেকে সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে। ওই দুর্ঘটনার পর তিনি স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সিলেট ছেড়ে মাগুরায় চলে আসেন। শহরতলির শিবরামপুর গ্রামের আরেফিন সালেহিন নামের এক ব্যক্তি বিনা ভাড়ায় আশ্রয় দেন তাঁকে। পঙ্গু স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই আছেন তিনি।

রেবেকা আরও বলেন, তাঁর নিজের কোনো পুঁজি নেই। ব্যবসার লেনদেন ভালো থাকায় সবাই তাঁকে বাকিতে সবজি দেন। বিক্রি করে পরে টাকা শোধ করতে হয়। সব কাজ নিজে করেন। তাই লাভও হয় ভালো। স্থানীয় হাটে সবজি বিক্রি করলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তাঁর। ঢাকার পাইকারি বাজারে গেলে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা লাভ থাকে। কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ নেই। মনের মধ্যে সাহস রাখেন। রাতবিরাতে কোনো দিন সমস্যা হয়নি, বরং সমস্যায় পড়লে পুরুষেরাই এগিয়ে আসেন। সকাল থেকে রাত অবধি ব্যবসায়িক কাজের ফাঁকে স্বামী-সন্তানেরও দেখাশোনার কাজ করতে হয়। সামলাতে হয় রান্নার কাজ।

শিবরামপুরের কৃষি উদ্যোক্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘খুব ভোরে আমার সবজিখেত থেকে লাউসহ বিভিন্ন সবজি সংগ্রহ করেন রেবেকা। অন্যান্য খেত থেকে সবজি সংগ্রহ করেন তিনি। রেবেকা একজন সফল ক্রেতা ও বিক্রেতা। সব সময় বাছাই করে সবজি কেনেন তিনি। তাঁর কেনা সবজি ভালো হওয়ায় বাজারে দামও ভালো পান।