রোহিঙ্গা শিবিরে সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে

রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে তীব্র পানিসংকট। দূরদূরান্ত থেকে জারিকেন ও কলসিতে পানি সংগ্রহ করে ঘরে ফিরছে শিশুরা। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান শিবিরে।  ছবি: গিয়াস উদ্দিন
রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে তীব্র পানিসংকট। দূরদূরান্ত থেকে জারিকেন ও কলসিতে পানি সংগ্রহ করে ঘরে ফিরছে শিশুরা। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান শিবিরে। ছবি: গিয়াস উদ্দিন

কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই পানির স্তর নেমে গেছে। বিকল্প উৎসের (প্রাকৃতিক জলাশয়, ছড়া ও পুকুরের পানি) ময়লাযুক্ত পানি পান করে ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ইতিমধ্যে ৩২ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে। 

টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দাদের ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার এই তথ্য কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের। এই শিবিরে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করে। খাওয়ার পানি নিয়ে দুর্ভোগে থাকা লোকজনের মধ্যে এখন কলেরা-ডায়রিয়ার আতঙ্ক ভর করেছে। একটি এনজিও এই শিবিরে পানি সরবরাহ করে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মো. আবদুল মতিন বলেন, রোহিঙ্গারা জলাশয় ও ছড়ার দূষিত পানি খেয়ে ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে। শিবিরের অকেজো নলকূপগুলো সচল করা হলে রোগ থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে তারা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে দুই বছর আগে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে শিবিরে নলকূপ বসানো হয়। শালবাগান শিবিরে প্রায় ১৮০টি নলকূপ স্থাপন করেছিল বিভিন্ন এনজিও। এ ছাড়া শিবিরে একটি জলাশয় ও একটি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে। রোহিঙ্গারা এগুলোর পানিও পান করে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেকনাফের প্রকৌশলী সনজিত কুমার মিত্র বলেন, এখন ১৮০টি নলকূপের মধ্যে ৩২টির মতো সচল রয়েছে। পানির স্তর সঠিকভাবে পরিমাপ না করে স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাকিগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। 

সনজিত কুমার মিত্র আরও জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। আগে ১০০ থেকে ৫০০ ফুট গভীরে খাওয়ার পানি পাওয়া যেত। এখন ৭০০ থেকে ১ হাজার ফুট নিচেও পাওয়া যাচ্ছে না। পানির সংকট নিরসনে এডিবির সহায়তায় সেখানে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা চলছে।

সরেজমিনে শিবিরের অসংখ্য নলকূপ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিছু নলকূপের ওপরের অংশ ও হাতল চুরি হয়ে গেছে। 

টেকনাফের জাদিমোরা রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা আমির হোসেনের (৭০) পরিবারে সদস্য রয়েছে ১৯ জন। গত দুই বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। গত রোববার ৮-১০ বার পাতলা পায়খানা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ করা পানি খাওয়ার উপযুক্ত নয়। বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। এ সময় দেখা যায়, শিবিরের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ প্লাস্টিকের জারিকেন, কলসি ও বালতি নিয়ে পানির উৎসস্থলে ছুটছে। সেখানে জারিকেন, কলসি ও বালতির দীর্ঘ সারি। প্রতিদিন দুবার পানি দেওয়া হয়। এ জন্য গভীর রাত থেকে দুপুরে রোদের মধ্যে অপেক্ষা করছে রোহিঙ্গারা।