গরীবের ঘরে সৌরবিদ্যুতের আলো

রংপুরের মিঠাপুকুরের সবচেয়ে বড় হাট শঠিবাড়ির সড়ক এখন বিদ্যুতে আলোকিত। দোকানে দোকানেও বিদ্যুৎ। ক্রেতারা অনেক রাত পর্যন্ত কেনাকাটা করেন। জেলার সবচেয়ে বড় এ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের স্বাস্থ্যসেবা, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির থেকে শুরু করে হতদরিদ্র মানুষের ঘর আলোকিত হচ্ছে সৌরবিদ্যুতে।

আজ থেকে ১০০ বছরের বেশি সময় আগে বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের আলো জ্বেলেছিলেন রংপুরের এই মিঠাপুকুর থেকেই। সেই মিঠাপুকুরেই পরিবেশবান্ধব সবুজ বিদ্যুৎ হিসেবে এখন সবার কাছে পরিচিত সৌরবিদ্যুৎ। 

রংপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে মিঠাপুকুর উপজেলা। উত্তরের জনপদের প্রান্তিক এই উপজেলা সৌরবিদ্যুতে আলোকিত করার প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর-কাবিটার অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল)। প্রকল্পটি ২০১৫-১৬ সাল থেকে বাস্তবায়ন করছে ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (আরএসএফ)। প্রকল্পটি ২০২৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি অর্থে ৩ হাজার ৫৫৭টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এ কাজে এ পর্যন্ত সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।

প্রকল্প সম্পর্কে আরএসএফের রংপুর এরিয়া ফিল্ড অপারেশন ম্যানেজার আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, বিনা মূল্যে সোলার বিদ্যুৎ’ স্লোগান সামনে রেখে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে উপজেলার কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলোকিত করা হচ্ছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার লোকসংখ্যা আনুমানিক সাড়ে পাঁচ লাখ। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে সৌরবিদ্যুতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা পাচ্ছে উপজেলার এক লাখের বেশি পরিবার। সৌরবিদ্যুতের আওতায় এসেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মিলিয়ে ১৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১ হাজার ৫০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ-মন্দিরেও রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। প্রত্যন্ত এই উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ৬৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকেও আছে সৌরবিদ্যুৎ। উপজেলার দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প, কবরস্থান, শ্মশানঘাট আলোকিত হয়েছে সৌরবিদ্যুতে।

শঠিবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মেসবাহুর রহমান বলেন, উপজেলা সদর ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলার সড়কগুলোতে বাতি স্থাপন করায় মানুষ রাতেও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছে।

Untitled-2q
Untitled-2q

উপজেলার রাস্তাঘাটে ৯৪৭টি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিগামী ফুলবাড়ী মহাসড়কটি সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। আগে এ সড়কে বাতি না থাকায় যাতায়াত নিরাপদ ছিল না। ছিনতাই ও দুর্ঘটনায় পড়ত পথচারীরা। এ সড়কে সৌরবিদ্যুতের বাতি স্থাপন করায় সমস্যার অনেকাংশই মিটে গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

হতদরিদ্র ১ হাজার ১০০ পরিবারের বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামের ২২ হাজার মানুষ সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে ধোঁয়াবিহীন পরিবেশবান্ধব চুলায় রান্না করছেন।

উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের সৌরবিদ্যুতের সুবিধাভোগী আবুল কাশেম বলেন, ‘আগোত কেরোসিন তেলের কুপি জ্বালেয় আছনো। এলা এই সরকার হামার ঘরোত সৌরবিদ্যুতের বাতি দিছে। হামার ঘর উজাল হইছে।’

শঠিবাড়ি হাটসহ এই উপজেলায় হাটবাজার রয়েছে ৫৮টি, যার সব কটিই সৌরবিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এসব হাটে স্থাপন করা হয়েছে মোট ৪০০টি সড়কবাতি। এতে উপকৃত হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারাও। 

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এ প্রকল্প পুরো বাস্তবায়িত হলে এলাকার অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে।