তামাক ব্যবসায় সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার চায় তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো

প্রজ্ঞা ও আত্মার আয়োজনে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক বাংলাদেশ ২০১৯–এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
প্রজ্ঞা ও আত্মার আয়োজনে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক বাংলাদেশ ২০১৯–এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার চায়।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) আয়োজনে ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক বাংলাদেশ ২০১৯’ প্রতিবেদন প্রকাশ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে এসব দাবি করা হয়।

তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক বাংলাদেশ ২০১৯–এর আলোকে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার বাংলাদেশের স্কোর ৭৭, যা গতবার ছিল ৭৮। এক ধাপ এগোলেও তা সন্তোষজনক নয় বলে প্রতিবেদেন উল্লেখ করা হয়। সেখান আরও বলা হয়, ৩৩টি দেশের মধ্যে যে ৩টি দেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে মাত্র জাপান ও জর্ডান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের হাতে একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানির ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের উচ্চপদস্থ কয়েকজন রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাক কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারত্বের সুযোগে কোম্পানিগুলোর জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করা সহজ হয়েছে। এতে জনস্বাস্থ্য ক্ষতির মুখে পড়ছে। তারা এসব ব্যবসা থেকে সরকারের অংশীদারত্বের প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

এ ছাড়া তামাক কোম্পানির সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ, স্বচ্ছতা–সংক্রান্ত পদক্ষেপ, সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ, নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির অংশগ্রহণ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম ও তামাক কোম্পানিকে সুবিধা প্রদানের বিষয়গুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

তামাক কোম্পানির সঙ্গে সব যোগাযোগের তথ্য সরকারকে প্রকাশ করা, তামাক কোম্পানিকে পুরস্কৃত করার কোনো অনুষ্ঠানে সরকারি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা, এসব কোম্পানিকে দেওয়া সব সুবিধা প্রত্যাহার, নতুন কোনো বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলা

প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তরা। ছবি: সংগৃহীত
প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তরা। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ধূমপানের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ই-সিগারেট বাড়ছে। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া, এ দেশে ধূমপানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার আছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে সব সময় যেকোনো ক্ষেত্রে নিচের দিকে দেখানোর জন্য চেষ্টা করে। এ ধরনের প্রতিবেদনের সঙ্গে আমি একমত নই।’ যারা প্রতিবেদন তৈরি করে, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে বাংলাদেশকে ছোট করে যেন না দেখানো হয়।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অঙ্গীকার করেছেন, তা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মন্ত্রীরা যে সংহতির কথা বলে যান, তা সংসদে গিয়ে ভুলে যান। এই দ্বৈতনীতি নিয়ে তামাকশিল্পের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা যাবে না। এ ছাড়া তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণে জবাবদিহির জায়গা তৈরি করার আহ্বান জানান তিনি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান করে প্রজ্ঞা। তিনটি বিভাগে এই পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম আলো থেকে সুহাদা আফরিন, সময় টেলিভিশনের মামুন আবদুল্লাহ এবং বাংলানিউজ২৪.কমের শরীফ সুমন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন থামাসাত ইউনিভার্সিটি থাইল্যান্ড, জিজিটিসি, হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি মেরি আসুন্তা, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর, বাংলাদেশ কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের, আত্মার আহ্বায়ক মোর্তুজা হায়দার প্রমুখ।