নরেশের কাঠের শিল্পকর্ম

কাঠের ওপর নকশা ফুটিয়ে তুলছেন নরেশ কুমার সূত্রধর।  ছবি: প্রথম আলো
কাঠের ওপর নকশা ফুটিয়ে তুলছেন নরেশ কুমার সূত্রধর। ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকায় বাস করেন নরেশ কুমার সূত্রধর। পারিবারিক পেশার কারণেই কাঠ আর কাঠের যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচয় সেই ছোটবেলায়। কিন্তু গতানুগতিক কাঠের কাজে মন নেই তাঁর। ছোটবেলা থেকেই কাঠের ওপর নানা রকম নকশা ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে দক্ষতা। তাঁর নিপুণ হাতে মূর্ত হয়ে ওঠে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় পর্যায়ের নেতা আর দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব মানুষের অবয়ব।

নরেশ কুমারের বাড়িতে বসে কথা হয় পরিবারের সদস্যসহ তাঁর সঙ্গে। তাঁর বাবা কালীপদ সূত্রধর ও মা সাবিত্রী রানী সূত্রধরের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট নরেশ কুমার সূত্রধর। স্থানীয়ভাবে তিনি বাচ্চু নামে পরিচিত। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু হলেও বেশি দূর এগোতে পারেননি। পরিবারের ব্যবসায় না গিয়ে শখের বশে শুরু করেন কাঠ খোদাই করে ছবি বানানোর কাজ। ধীরে ধীরে তিনি এ কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন। তাঁর হাতে কাঠের ওপর জীবন্ত হয়ে ওঠে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতার ছবি।

নরেশ জানান, ৭৫০টি শিল্পকর্ম নিয়ে ২০০৯ সালে নলিনীকান্ত ভট্টশালী আর্ট গ্যালারিতে তিনি প্রদর্শনী করেন। ঢাকার রেজাউল করিম নামের এক ব্যক্তি তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তবে সেখানে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে আর এসব প্রদর্শনী নিয়ে ভাবেননি তিনি।

স্ত্রী কল্পনা রানী সূত্রধর আর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে নরেশের সংসার। বড় ছেলে মিশন কুমার সূত্রধর বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে তাপস কুমার সূত্রধর এবার কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করলেন। বড় মেয়ে তুলি রানী সূত্রধর ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে শহরের গৌরী-আরবান বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

কল্পনা রানী বলেন, প্রথম প্রথম এসব কাজ দেখে সময়ের অপচয় বলে মনে হতো। কিন্তু এখন স্বামীকে একজন শিল্পী হিসেবে মনে করেন তিনি। এখন তাঁর অনেক গর্ব হয়।

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এখনো এই শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন নরেশ কুমার সূত্রধর। তিনি বলেন, ‘নেশার ঝোঁকে এ কাজ বেছে নিয়েছিলাম। আগের মতো এখনো কাজ নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। এ কাজটিই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করতে চাই।’