'ছাত্রলীগ নেতা এত টাকা কোথায় পেলেন?'

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি বাজার ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ছাত্রলীগের বংশাল থানার সভাপতি ইমরান হোসেন ওরফে জন। সংগঠনের নেতারা বলছেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো নেতা দরপত্রে অংশ নিতে পারেন না।

কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই ইমরান হোসেনের লোকজন বাজার থেকে টোল আদায় শুরু করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া একজন ছাত্রনেতার এত টাকা বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁর অর্থের উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘বাজার ইজারা নেওয়ার জন্য এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন?’

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান প্রথম আলোকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের নেতাদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই কাজে কেউ জড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএসসিসির নয়াবাজার এলাকার নওয়াব ইউসুফ মার্কেটের ভেতরের কাঁচাবাজার থেকে চার বছর ধরে খাস আদায় করা হচ্ছিল। বাজারটি এক বছরের জন্য ইজারা দিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ। ইজারার সরকারনির্ধারিত মূল্য ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫৪৫ টাকা।

করপোরেশন সূত্র বলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। এগুলোর মধ্যে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিল্লাল শাহের ব্যক্তিগত সহকারী শেখ মো. গোলাম কিবরিয়া ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমেদ ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী ওয়াহিদুর রহমান ১ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দেন।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইমরান হোসেনকে কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশটি মেয়রের দপ্তরে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতাকে মূল টাকা বাদে আরও ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর এবং ৫ শতাংশ আয়কর জমা দিতে হবে। সে হিসাবে সর্বোচ্চ দরদাতা ইমরান হোসেনকে প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।

>

নওয়াব ইউসুফ মার্কেটের কাঁচাবাজারের ইজারার দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে জানান, ২০১৫ সালের দিকে ইমরান হোসেনকে বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে। তিনি কোনো দরপত্রে অংশ নিয়েছেন কি না, তা তিনি জানেন না।

এদিকে বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ১ অক্টোবর থেকেই টোল আদায় শুরু করেছেন ইমরান হোসেনের লোকজন। তাঁরা টোলও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানি প্রথম আলোকে বলেছেন, বাজারে সবজি ও মাছের দোকান আছে অন্তত ১৬০ টি। এগুলোর মধ্যে সবজির দোকানের প্রতি টুকরি থেকে দৈনিক ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আগে দিতে হতো ৩০ টাকা। একটি সবজির দোকানে চার থেকে ছয়টি টুকরি থাকে। স্থায়ী মাছের টুকরি থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আগে নেওয়া হতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা করে। আর অস্থায়ী মাছের টুকরি থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা। আগে দিতে হতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ইমরান হোসেন ছাত্ররাজনীতি করেন। তাঁর ব্যক্তিগত কোনো ব্যবসা নেই। বাজার ইজারা নেওয়ার জন্য সোয়া দুই কোটি টাকা তিনি কোথায় পেয়েছেন?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঢাকার স্থানীয়। তাঁদের বাড়ি আছে, দোকানপাট আছে। এসব থেকে ভাড়া পান।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেছেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতারা টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। তাহলে আপনি কীভাবে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান হোসেন এবার বলেন, তাঁর চাচা শখ করে দরপত্রে তাঁর নাম দিয়েছেন। এখানে তাঁর এক টাকাও নেই। নাম দিলে কোনো সমস্যা হবে না ভেবেই তিনি আপত্তি জানাননি। আর কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই টোল আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগের এই নেতা।

কার্যাদেশের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইমরান হোসেনকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্যাদেশ অনুমোদনের ফাইল মেয়রের দপ্তরে আছে।

কার্যাদেশ দেওয়ার আগেই ইমরানের লোকজন বাজার থেকে টোল আদায় করছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অভিযোগ সত্য নয়। ইমরানের সহযোগিতায় আমাদের লোকজন খাস আদায় করছেন।’