ভোলায় দোয়া অনুষ্ঠান স্থগিত, বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সহিংসতার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ডাকা দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ আজ শুক্রবার বাদ জুমা ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল। ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক অনুমতি না দেওয়ায় দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়।

ঐক্য পরিষদ যেন শহরে কোনো লোক জমায়েত না করতে পারে, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ জন্য ভোলা-চরফ্যাশন আন্ত মহাসড়কে বাস চলাচল ও ভোলা-বরিশাল, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথসহ সব নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলার সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠের তিনটি ফটকে, মাঠের মধ্যে, সরকারি বালক বিদ্যালয়ের সামনে, ভোলা সদর রোডে, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল কার্যালয়ের সামনে, বাংলা স্কুল মোড়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে, ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট, ইলিশা বাসস্ট্যান্ড, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড, খেয়াঘাট, ইলিশা লঞ্চঘাট, ভেদুলিয়া ফেরিঘাটসহ শহরের অলিতে-গলিতে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলা শহরেও ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বরিশাল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৮), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের টহল দলকে সাইরেন বাজিয়ে টহল দিতে দেখা যায়।

বাস চলাচল ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও ছোট ছোট অবৈধ যান চলাচল করছে। নৌপথে চলছে অবৈধ স্পিডবোট ও ট্রলার। এসব যানে যাত্রীরা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।

লালমোহন উপজেলা থেকে আসা সিরাজউদ্দিন পাটোয়ারী নামের এক রোগী বলেন, শুক্রবারে ভোলার প্রাইভেট ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢাকা-বরিশাল থেকে বড় বড় চিকিৎসক আসেন। তিনি ভোলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গতকাল সিরিয়াল লিখিয়েছেন। সকালে রমাগঞ্জ থেকে লালমোহন বাজারে এসে দেখেন বাস চলাচল বন্ধ। পরে ৪০০ টাকা মোটরসাইকেল ভাড়া দিয়ে ভোলায় এসেছেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধের কারণে ভোলায় এসে দেখেন সেই চিকিৎসকই আসেননি। বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধের কারণে তাঁর মতো অনেকেই ভোগান্তির শিকার হয়ে ফিরে গেছেন।

একইভাবে অনেকে দুর্ভোগ সয়ে বরিশাল গেছেন স্পিডবোট ও ট্রলারে।

ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মিঞা বলেন, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা বাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভোলা বন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, আপাতত ভোর থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ভোলা-বরিশাল, ভোলা-লক্ষ্মীপুরসহ জেলার সব নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সময় আরও বাড়তে পারে।

ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) বলেন, শুক্রবার দুপুরে জুমাবাদ ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠান করার লিখিত অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ভোলার সরকারি বিদ্যালয় মাঠে দোয়া-মোনাজাত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে বাস ও নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান বলেন, ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে আজ শুক্রবার গত রোববার পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া-মোনাজাত হবে, এটা ছিল পূর্বনির্ধারিত। এর আগে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে যখন জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করা হলো, তখন তিনি অনুমতি দেননি।

সদস্যসচিব বলেন, দোয়া-মোনাজাতের অনুষ্ঠানে চরমোনাইয়ের পীর সাহেব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ফায়জুল করিমের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনুমতি না পেয়ে তাঁরা তাৎক্ষণিক ঐক্যের নেতাদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ঈদগাহ মাঠে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ১০ জন পুলিশসহ দেড় শতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভোলায় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ গঠিত হয়।