চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দ: তদন্ত-বিচারে অগ্রগতি নেই

চার বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া কোকেন মামলার তদন্ত ও বিচারে অগ্রগতি নেই। এই ঘটনায় দুটি মামলা রয়েছে। একটি মাদক নিয়ন্ত্রণ আরেকটি চোরাচালান আইনে। একটি মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় আটকে আছে আরেকটির সাক্ষ্য গ্রহণ। জামিনে গিয়ে পলাতক বেশির ভাগ আসামি।

মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি বলছেন, মামলা দুটি হলেও ঘটনা, সাক্ষী একই। দুটি মামলার একসঙ্গে সাক্ষ্য নেওয়া হলে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। নইলে এক সাক্ষীকে দুবার হাজির করতে হবে। এতে বিচার বিলম্ব হতে পারে।

২০১৫ সালের ৬ জুন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ চালানটি উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজীকরণ করা হয়। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এর আগে কখনোই বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ভোজ্যতেল আমদানি করেনি। তা ছাড়া, তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তর করার মতো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই।

কোকেন জব্দের ঘটনায় চট্টগ্রামের বন্দর থানায় ২০১৫ সালের ২৭ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান আইনের ধারায় একটি মামলা হয়। আসামি করা হয় চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে।

আদালত সূত্র জানায়, ঘটনার পাঁচ মাস পর ২০১৫ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আটজনকে আসামি করে আদালতে মাদক আইনে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে চোরাচালান আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুটিতে চালানের গন্তব্য অজানা, আন্তর্জাতিক চক্র শনাক্ত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ নারাজি আবেদন করলে আদালত র‍্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু র‍্যাবের তদন্তেও চালানটির গন্তব্য বের করা সম্ভব হয়নি। র‍্যাব নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল আদালতে মাদক আইনে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত তা গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়।

গত ২৮ আগস্ট, ২৯ সেপ্টেম্বর ও ১৬ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।

মামলাটি পরিচালনা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কোকেন জব্দের ঘটনার মাদক আইনের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করে আদালতে। একই ঘটনায় চোরাচালান আইনের মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি র‍্যাব। মামলা দুটি হলেও ঘটনা ও সাক্ষী একই। দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে চললে সময় বাঁচবে। একজন সাক্ষীকে দুবার আসতে হবে না। এতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। এ জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দিতে র‍্যাবকে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান আইনে একই ঘটনায় হওয়া দুটি মামলার বিচারও একসঙ্গে হয়েছিল।

জানতে চাইলে চোরাচালান আইনের মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব-২–এ কর্মরত পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আরও মাসখানেক লাগতে পারে। নতুন কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কি না—প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো পাওয়া যায়নি।

পলাতক আসামিরা অধরা

মামলার ১০ আসামির মধে৵ শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া ও চট্টগ্রামের মোস্তাক আহমদ। আর জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন নূর মোহাম্মদ। পুলিশ সূত্র জানায়, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নূর মোহাম্মদ। জামিনে রয়েছেন কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল আলম ও আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। কারাগারে রয়েছেন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা ও পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান।