নারীর শান্তি-নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশ তলার দিকে

নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তলার দিকে। ১৬৭টি দেশ নিয়ে তৈরি তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২। বাংলাদেশের পেছনে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ আফ্রিকা মহাদেশের।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং নরওয়ের দ্য পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো যৌথভাবে এই
তালিকা তৈরি করেছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি তারা ওয়াশিংটন থেকে ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা সূচক ২০১৯-২০: নারীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ, ন্যায্যতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে টেকসই শান্তি অনুসরণ’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের এটি দ্বিতীয় প্রতিবেদন।

তালিকার শীর্ষে আছে নরওয়ে। তালিকার ২ ও ৩ নম্বরে আছে যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড ও ডেনমার্ক। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ইয়েমেনের নারীরা। দেশটির অবস্থান তালিকার ১৬৭ নম্বরে। তার ওপরে আছে আফগানিস্তান (১৬৬) ও সিরিয়া (১৬৫)।

নারীর ভালো থাকার বা কল্যাণের তিনটি মৌলিক বিষয়কে প্রতিবেদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে: অন্তর্ভুক্তি, ন্যায্যতা ও নিরাপত্তা। এ ক্ষেত্রে মোট ১১টি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তি পরিমাপের সূচক হিসেবে শিক্ষা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিয়োগ, মুঠোফোন ব্যবহার ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব। আইনগত বৈষম্য, পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক রীতিনীতিকে ন্যায্যতার সূচক হিসেবে দেখা হয়েছে। নিরাপত্তার সূচক ছিল তিনটি: স্বামীর নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তা ও কাঠামোগত সহিংসতা।

প্রতিবেদনে ১১টি সূচকের নানা ধরনের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যমূলক রীতিনীতির উদাহরণ দেওয়ার সময় বলা হয়েছে, বেতনের জন্য নারীদের চাকরি করাকে পাকিস্তানের ৭৫ শতাংশ পুরুষ সমর্থন করে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ, ইয়েমেন, ইরাক, লিবিয়া ও আফগানিস্তানের অবস্থান কিছুটা ভালো। এই পাঁচটি দেশের ৫০ শতাংশ পুরুষ মনে করে, নারীদের চাকরি করা উচিত নয়।

প্রতিবেদনের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে নারী আন্দোলনের কর্মী ও নারীপক্ষের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো রিপোর্ট ভালোভাবে না পড়ে মন্তব্য করা ঠিক না। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২ বা ১৪৭ হলে কিছু এসে যায় না। প্রতিদিনের সংবাদপত্র ও নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখছি, বাংলাদেশের নারীরা ভালো নেই।’

প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, নারীর অন্তর্ভুক্তি, তার প্রতি ন্যায্য আচরণ এবং তার নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর গুরুত্ব আছে নারীর জন্য, তার পরিবারের জন্য, অর্থনীতির জন্য, সর্বোপরি বৃহত্তর সমাজের জন্য। নারী যখন সমান অধিকার ও সুযোগ পাবে, তখন এই পৃথিবী আরও নিরাপদ, আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী হবে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি

প্রতিটি সূচকের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর আছে। ১১ সূচকে বাংলাদেশের মোট নম্বর দশমিক ৬১২। এ ক্ষেত্রে নরওয়ের নম্বর দশমিক ৯০৪ এবং ইয়েমেনের
দশমিক ৩৫১।

ভালো থেকে খারাপ—এভাবে দেশগুলোকে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সবচেয়ে খারাপের তালিকায় আছে বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ। কাজের সুযোগ, আইনগত বৈষম্য ও স্বামীর নির্যাতন—ওই তিনটি সূচকে বাংলাদেশ কম নম্বর পেয়েছে। বেশি নম্বর পেয়েছে পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা ও সংঘবদ্ধ সহিংসতা—এই তিনটি সূচকে। কোনো একটি সূচকেও বাংলাদেশ সবার চেয়ে ভালো করেনি। আবার কোনো একটি সূচকে সবচেয়ে কম নম্বরও পায়নি।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নেপাল। দশমিক ৭১৭ নম্বর পেয়ে তালিকার ৮৪ নম্বরে আছে এই দেশ। তালিকায় শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটানের অবস্থান যথাক্রমে ১০৭, ১১১ ও ১১৮। ভারত ১৩৩ নম্বরে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান আছে তালিকার যথাক্রমে ১৬৪ ও ১৬৬ নম্বরে। অন্য প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অবস্থান ১৫০ নম্বরে।