রাত হলেই ভুতুড়ে পরিবেশ জামালপুর বাস টার্মিনালে

কোটি টাকায় নির্মিত জামালপুর পৌর বাস-টার্মিনালটি গত ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।  ছবি: প্রথম আলো
কোটি টাকায় নির্মিত জামালপুর পৌর বাস-টার্মিনালটি গত ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

কোটি টাকায় নির্মিত জামালপুর পৌর বাস টার্মিনালটি ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। টার্মিনালটি বর্তমানে পুরোনো বাস ও ট্রাক পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন বাস মালিক তাঁদের সুবিধামতো স্থানে সড়কের পাশে অবৈধ স্ট্যান্ড তৈরি করে বাস পরিচালনা করে আসছেন। এতে সড়কে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালটি জনশূন্য। কোথাও লোকজনের আনাগোনা নেই। টার্মিনালের পেছনে পুরোনো কিছু বাস ও ট্রাক রাখা। চারপাশ জঙ্গলে ভরে গেছে। টার্মিনালের সামনে খড় শুকাতে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। ভেতরে ভবনজুড়ে নোংরা পরিবেশ। ভবনের ভেতরে চারদিকে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ছড়ানো। কাউন্টারসহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কাচের জানালাগুলো ভাঙা। ভেঙে গেছে কাঠের দরজাগুলো। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার নামে বরাদ্দ কাউন্টারগুলো বন্ধ।

জামালপুর পৌরসভা সূত্র জানায়, শহর যানজটমুক্ত করার অংশ হিসেবে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় এ টার্মিনাল নির্মিত হয়। প্রায় দেড় একর জায়গার মধ্যে নগর পরিচালনা ও উন্নীতকরণ অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় পৌরসভা নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। এতে জমি কেনা, ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে খরচ হয় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০০২ সালে টার্মিনাল চালু হয়। ২০০৯ সাল থেকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

টার্মিনালের পূর্ব পাশের চা-দোকানি আজগর আলী বলেন, দিনের বেলা টার্মিনালে সুনসান নীরবতা বিরাজ করে। কোনো যানবাহন ও মানুষ থাকে না। তবে রাতের বেলায় দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন পরিবহনের বাস এসে টার্মিনালে ভরে যায়। ১০ বছর ধরে এভাবেই চলছে। টার্মিনালে শুধু রাতে গ্যারেজ হিসেবে বাস রাখা হয়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন না আসায় টার্মিনালজুড়ে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দু-একটি বাতি ছাড়া কোথাও আলো জ্বলে না। টার্মিনালে বাস না আসায় এখানকার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।

রাজীব পরিবহনের সুপারভাইজার জুয়েল মিয়া বলেন, টার্মিনালটি এখন মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। রাতে এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তখন মাদকসেবী ছাড়া অন্য কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। বাসমালিকেরা ইচ্ছামতো স্থানে অস্থায়ী টার্মিনাল করে বাস পরিচালনা করছেন।

জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, টার্মিনালটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এটি এখন যাত্রীদের জন্য নিরাপদ নয়। শুরুর দিকে এ টার্মিনাল থেকে জামালপুর-ঢাকা রুটে মুক্তি নামের একটি বাস সার্ভিস চালু ছিল। কিন্তু শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় ধীরে ধীরে যাত্রীসংখ্যা কমে যায়। তারপর থেকেই টার্মিনালটি বন্ধ হয়ে যায়। পরিবহন মালিকেরাও এ টার্মিনাল থেকে বাস পরিচালনা করতে চান না। তবে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় টার্মিনাল ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া নানা সমস্যায় জর্জরিত টার্মিনালটি। পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে টার্মিনাল সংস্কার করলে আবারও সেখানে বাস পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম বলেন, শহর যানজটমুক্ত করতে ২০০২ সালে টার্মিনালটি চালু করা হয়েছিল। কয়েক বছর ভালোই চলার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে টার্মিনালে রাতে বিভিন্ন অপরাধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। টার্মিনালটি চালু করতে বহুবার তিনি উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। নতুন করে আবারও টার্মিনালটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে সেখান থেকে বাস সার্ভিস চালু হয়।