বিএনপি নেত্রী অন্য বন্দীদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। আজারবাইজান, ২৬ অক্টোবর। ছবি: বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। আজারবাইজান, ২৬ অক্টোবর। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে অন্য বন্দীদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করছেন। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে পুনরায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, যারা অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন নিজস্ব গতিতেই চলবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় হিলটন হোটেলে আজারবাইজানে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদি আমাদের দলের কেউ অপরাধে জড়িত হয়, সে তৎক্ষণাৎ শাস্তি ভোগ করছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, সে যে-ই হোক এবং যে দলই করুক না কেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে একজন প্রবাসীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী অন্য বন্দীদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী একজন গৃহপরিচারিকা কারাগারে তাঁর সঙ্গে রাখা হয়েছে। তার মানে খালেদা জিয়াকে কারাগারে সে সেবা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারাগারের ইতিহাসে বা কোনো দেশে এমন নজির নেই, কোনো নিরপরাধ গৃহপরিচারিকা একজন বন্দীর সঙ্গে কারাগারে অবস্থান করে। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই সুবিধা ভোগ করছেন। খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে একটি কেবিনে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়া অসুস্থ, কারণ তারা তাঁর মুক্তির দাবিকে আন্দোলনের ইস্যু বানাতে এটা বলছে। কিন্তু বিএনপি তাঁর মুক্তির আন্দোলন বা জনমত গঠন করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা মামলায় সাজা হয়েছে। আরও মামলা চলমান রয়েছে। খালেদা জিয়ার দুই ছেলে মানি লন্ডারিং, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘অপরাধীরা অপরাধীই, আমরা অপরাধীদের অপরাধীর দৃষ্টিতেই দেখব এবং আমরা সেটাই দেখার চেষ্টা করছি।’ ‘অন্যকে শিক্ষা দেওয়াটা নিজের ঘর থেকেই শুরু করা উচিত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সেটাই করছি (দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ) এবং আমি এটি অব্যাহত রাখব।’

বিএনপি-জামায়াত সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের পাঁচ বছরের দুঃশাসনে দেশে দুর্নীতির কোনো সীমা ছিল না।’ শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীন স্বার্থে বিভিন্ন বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আজারবাইজানের দূত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, ‘অভিযানগুলোতে আমরা ভালো ফল পাচ্ছি। কারণ, মাদক একটি ব্যক্তি ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। আমি ক্ষমতায় আসার পর সর্বাত্মকভাবে দেশের ও জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে আবাস গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু কিছু এনজিও তাদের সেখানে যেতে দিতে চায় না। তিনি বলেন, দেশে স্বাস্থ্য, আইসিটি, সামাজিক নিরাপত্তা সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ সাফল্যের কারণে বিশ্বে উন্নয়নের জন্য রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। তিনি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে আরও ১০টি বোয়িং এয়ারক্রাফট কিনে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান নেটওয়ার্ক বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ও কানাডা থেকে তিনটি বোয়িং বিমান ক্রয় করা হবে।