চট্টগ্রামে মঞ্চ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে নামিয়ে দিলেন মেয়র নাছির

আওয়ামী লীগের ছয় সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সভায় মঞ্চে নেতারা। পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। ছবি: জুয়েল শীল
আওয়ামী লীগের ছয় সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সভায় মঞ্চে নেতারা। পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। ছবি: জুয়েল শীল

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ তিনজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন তিন নেতাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। এ ঘটনায় দলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বাধ্য হওয়া অপর দুই নেতা হলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং নগর আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী।

দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাঁরা মঞ্চে ওঠেন বলে দাবি করেন মেয়র নাছির উদ্দীন। তবে নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার ভাষ্য, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে এ কাণ্ড ঘটতে পারে।

রোববার সকাল সোয়া ১০টায় চট্টগ্রাম বিভাগের ছয়টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয় নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন একটি কমিউনিটি সেন্টারে। প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের ঘটনার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ছাড়াও একাধিক সাংসদ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা।

বেলা ১১টা থেকে সোয়া ১১টার মধ্যে তিন নেতাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মঞ্চ থেকে হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি দ্রুত মেয়র নাছির উদ্দীনের কাছে গিয়ে আপত্তি জানান। মেয়র নাছির উদ্দীন তাঁকে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘অঙ্গসংগঠনের কারও মঞ্চে ওঠার কথা নয়। তুমি কি উঠেছ?’ এরপর মহিউদ্দিন বাচ্চু মেয়রকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের আবেগের জায়গায় আছেন। তাঁর স্ত্রী নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নয়, মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হিসেবে মঞ্চে উঠতে পারেন। আর নিজের ইচ্ছায় তিনি ওঠেননি। মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী (নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) তাঁকে মঞ্চে উঠিয়েছেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পর হাসিনা মহিউদ্দিনের জন্য মঞ্চের ডান দিকে একটি চেয়ারের ব্যবস্থা করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সারিতে নেমে আসেন আবদুচ ছালাম ও আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী।

জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রতিনিধি সভার মঞ্চে কে থাকবেন আর কে থাকতে পারবেন না, তা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়। মঞ্চ মন্ত্রী, সাংসদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও নগর কমিটির সহসভাপতিদের জন্য বরাদ্দ ছিল। এর বাইরে যাঁরা ওঠেন, তাঁদের বিনীতভাবে নেমে যেতে বলেছি।’

মেয়র নাছিরের ভাষ্য, ‘শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আমি তাঁদের নেমে যেতে বলেছি। এটা নিয়ে রাজনীতি করা দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর হাসিনা মহিউদ্দিন গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

প্রতিবাদকারী নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘প্রতিনিধি সভায় হাসিনা মহিউদ্দিন তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন। মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর আহ্বানেই তিনি মঞ্চে উঠেছেন। এর ২০ মিনিটের মধ্যে মেয়র নাছির তাঁকে নেমে যেতে বলেন। তখন আমি মেয়রের কাছে আপত্তি জানিয়েছি। এখানে ঝগড়া-সংঘাতের কোনো বিষয় ছিল না।’

মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে নামিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি। যদিও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হাসিনা মহিউদ্দিনের মঞ্চে ওঠার কথা ছিল না। কিন্তু নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একাধিক বিভাগীয় সম্পাদক কী করে মঞ্চে ওঠেন?’

সিদ্ধান্ত অমান্য করে মঞ্চে ওঠা নেতাদের নাম জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, নগরের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনি মাইক্রোফোনে বিভিন্ন ঘোষণা দেন। তিনি কী করে মঞ্চে ওঠেন?

দলীয় সূত্র জানায়, হাসান মাহমুদ হাসনি নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি মেয়র নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মঞ্চে উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে জানান, হাসিনা মহিউদ্দিন এবং আবদুচ ছালামকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া শোভন হয়নি। তবে দলীয় শৃঙ্খলার চর্চাও সবাইকে করতে হবে। এই দুই নেতা মনে করেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে এ কাণ্ড ঘটতে পারে।