৫ বছরেও অনুমোদন হয়নি জনবলকাঠামো

পটুয়াখালী
পটুয়াখালী

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পাঁচ বছর আগে শুরু হয়েছে। এখন পাঁচটি শিক্ষাবর্ষে ২৫০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এ বছর আরও ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চলছে। তবে কার্যক্রম শুরুর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও কলেজের শিক্ষকসহ জনবলকাঠামো অনুমোদন হয়নি। কলেজের কার্ডিওলজি, অ্যানেসথেসিওলজি এবং চর্ম ও যৌন বিভাগে কোনো প্রভাষকই নেই। এতে এসব বিভাগে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চল সফরকালে পটুয়াখালীতে এক জনসভায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় পটুয়াখালীতে মেডিকেল কলেজের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একটি ভবনে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। ইতিমধ্যে কলেজটিতে ছয়টি শিক্ষাবর্ষ চলমান রয়েছে।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর শিক্ষার্থী বাড়লেও জনবলকাঠামো বাড়েনি। এই মেডিকেল কলেজের জনবলকাঠামো অনুযায়ী, ২০৫ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, ৪ জন দ্বিতীয় শ্রেণির, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ২১১ জন কর্মচারীর পদসহ মোট ৪২০টি পদ অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো তা অনুমোদন হয়ে আসেনি। কলেজের আটটি বিষয়ে টিউটরিয়াল ও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ২২ জন প্রভাষকের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র সাতজন। কার্ডিওলজি এবং অ্যানেসথেসিওলজি এবং চর্ম ও যৌন বিভাগে কোনো প্রভাষক নেই। 

শিক্ষার্থীরা জানান, যে তিনটি বিষয়ে প্রভাষক নেই, সেখানে অন্য বিভাগের প্রভাষক এসে ক্লাস নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে ১ জন অধ্যাপক, ১০ জন সহযোগী অধ্যাপক, ২১ জন সহকারী অধ্যাপক, ৭ জন প্রভাষকসহ মোট ৩৯ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন।

আবাসনসংকটও চরমে

মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নও হচ্ছে ধীর গতিতে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসক ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জরাজীর্ণ ভবনে পৃথক আবাসনের ব্যবস্থা করা হলেও সবার থাকার ব্যবস্থা করা যায়নি। ১৫০ জন শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করা হলেও এখানে থাকছেন ২৩৮ জন শিক্ষার্থী। ফলে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী রান্নাঘরেও থাকছেন। একটি কক্ষে গাদাগাদি করে ভবিষ্যৎ চিকিৎসকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট এ মুহূর্তে চরমে রয়েছে। পঞ্চম বর্ষের এক ছাত্র জানান, তাঁরা ছাত্রাবাসের রান্নাঘরেও থাকছেন। কক্ষগুলোতে টেবিল-চেয়ার রাখা সম্ভব না হওয়ায় বারান্দায় রাখতে হচ্ছে। এরপরও তাঁদের ঘুমাতে হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে।

মেডিকেল কলেজের হল সুপার মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকসংকটের পাশাপাশি আবাসনসংকটও চরমে। শিক্ষার্থীরাই খুব কষ্ট করে ছাত্রাবাসে বসবাস করছেন। এতে লেখাপড়াও বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বছর আরও ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন। পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নকাজের বিষয়ে মজিবুর রহমান বলেন, ১৪টি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে, তবে খুব ধীর গতিতে। যেভাবে হওয়ার কথা, সেভাবেও হচ্ছে না। তবে ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে আবাসনসংকট থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই মেডিকেল কলেজের অগ্রগতির লক্ষ্যে একনেকে ৫৮৪ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে সেই অবকাঠামো উন্নয়নকাজ ধীর গতিতে চলায় সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

গণপূর্ত বিভাগ, পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. তৈয়েবুর রহমান বলেন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে ২৭টি ভবন নির্মাণকাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তবে বর্তমানে ১৪টি ভবন ও মেডিকেল কলেজের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। চারটি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকাজের অবকাঠামো ও স্থাপত্য নকশা না পাওয়ায় ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং অপর নয়টি ভবনের কাজ দুটি প্যাকেজে ভাগ করে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ধীর গতির বিষয়ে তৈয়েবুর রহমান বলেন, ২০১৬ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মেডিকেল কলেজের জন্য জমি নির্ধারণে দেরি হওয়ায় ভবন নির্মাণকাজ আরও এক বছর বর্ধিত করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ কারণেই অবকাঠামো উন্নয়নকাজ শেষ করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সহযোগী অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর শিক্ষার্থী বাড়লেও জনবলকাঠামো বাড়েনি। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী মোট ৪২০টি পদ অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসকের ৭৭টি পদ এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ২৮টি পদ অনুমোদন হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলে ছাত্রছাত্রীদের আবাসনসংকট থাকবে না।