'রাজকুমারী'র ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার
পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকটির (রাজকুমারী রুমঝুম) ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার মাসহ স্বজনেরা।
শিশুটি এখন মায়ের সঙ্গে পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভীতরগড়-খালপাড়া এলাকায় নানা আইবুল ইসলামের বাড়িতে থাকছে। অভাবের সংসারে আইবুলের নিজেরই জীবিকা নির্বাহের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। তাঁর ওপর রিমু আক্তারের নবজাতক মেয়ে ও ছেলে জিসানের (৪) ভরণপোষণের ব্যবস্থা কীভাবে করবেন, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না আইবুল।
সন্তানটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় জেলা প্রশাসনের দেওয়া ১০ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি রিমু আক্তার।
গতকাল সোমবার দুপুরে ভীতরগড়-খালপাড়া এলাকায় আইবুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকানি আইবুল ইসলামের বাঁশের চাটাই ও টিনের ঘরের বারান্দায় রাজকুমারীর পরিচর্যা করছেন মা রিমু আক্তার। গতকাল শিশুটির বয়স ২৩ দিন হয়েছে বলে জানালেন তার মা।
রিমু আক্তারের বাবা আইবুল ইসলাম বলেন, প্রথম স্ত্রীর সংসারে তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর বিয়ে করলে দ্বিতীয় ঘরে রিমু আক্তারই তাঁদের একমাত্র সন্তান। প্রায় পাঁচ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন রিমু। পরে স্বামীকে নিয়ে পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সেখানে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রিমু। পরিবারের অমতে বিয়ে করার কারণে মেয়ের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না বলে জানান তিনি। এরপর সেখান থেকে স্বামীর সংসার ফেলে পার্বতীপুরের এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে যান রিমু। সেখানে ওই কন্যাশিশুর জন্ম হয়।
আইবুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে অশান্তির কারণে ১২ দিন বয়সী মেয়েটিকে পঞ্চগড়ে এসে ফেলে গিয়েছিল রিমু। মাঝেমধ্যে রিমু অসংলগ্ন কথা বলায় তার মানসিক কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য তার স্বামীর ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আর্থিক অভাবের কারণে আমরা তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। রিমুকে মানসিক চিকিৎসা দিয়ে তার জন্য একটি স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর ভাবতে হতো না।’
রিমু আক্তার বলেন, ‘আমি ছোট্ট শিশুটিকে পারিবারিক সমস্যার কারণে ফেলে গিয়ে ভুল করেছিলাম। আর কখনো এমন ভুল হবে না। আমি এই সন্তান দুটিকে মানুষ করতে চাই। কোনো আর্থিক সহায়তা পেলে তাদের লালন-পালনে আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকত না আমার।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি সোমবার (গতকাল) বিকেলে রিমু আক্তার ও সন্তানদের খোঁজ নিতে তাঁর বাবার বাড়িতে গিয়েছি। এর আগে রিমুকে শুকনো খাবার, শিশুর জন্য কাপড়চোপড় ও প্রসাধনী এবং ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সোমবার রিমুকেও কিছু কাপড়চোপড় দেওয়া হয়েছে।’
১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির মূল ফটকে শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে জেলা প্রশাসন। ২১ অক্টোবর শিশুটির মাকে খুঁজে বের করে পুলিশ। ২২ অক্টোবর রাত আটটায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মা রিমু আক্তারের কাছে শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। তিনি শিশুটির মায়ের সম্মতি নিয়ে শিশুটির নাম রাজকুমারী রুমঝুম রাখেন।
শিশুটিকে হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার মাকে ১০ হাজার টাকা, তার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, কম্বল ও প্রসাধনী দেওয়া হয়। রিমু আক্তার চার বছর বয়সী ছেলে সেজান ও নবজাতক রাজকুমারী রুমঝুমকে নিয়ে তাঁর মা–বাবার হেফাজতে থাকবেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে ছাড়পত্র দেয়।