'স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো জেন্ডার বান্ধব নয়'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা.মিল্টন হলে ‘স্বাস্থ্যসেবায় জেন্ডার বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ক্যাফে সায়েন্টিফিক সভায় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা.মিল্টন হলে ‘স্বাস্থ্যসেবায় জেন্ডার বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ক্যাফে সায়েন্টিফিক সভায় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো জেন্ডার বান্ধব নয়। পুরুষ ও নারীদের সেবার চাহিদা ভিন্ন, কিন্তু অনেক হাসপাতালেই পৃথক ওষুধের কাউন্টার নেই, পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থাও ভালো নয়। এমনকি জরুরি কক্ষে, ওয়ার্ডে, ওয়েটিং রুমে, ব্রেস্টফিডিং কর্নারে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান ব্যবস্থা অপ্রতুল। আর এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মানসিকতার পরিবর্তন খুবই জরুরি।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিল্টন হলে ‘স্বাস্থ্যসেবায় জেন্ডার বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ক্যাফে সায়েন্টিফিক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।

চিকিৎসক ফারজানা নুসরাতের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ থেকে সহযোগী অধ্যাপক ফারিহা হাসিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এসডিজি ৩ (স্বাস্থ্য) এবং এসডিজি ৫ (জেন্ডার) অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার জেন্ডার বিষয়ক বিভিন্ন নীতিমালা, আইন, কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, যেমন লিঙ্গ সমতা কৌশল, লিঙ্গ সমতা অ্যাকশন পরিকল্পনার মতো নানা পদক্ষেপ। তবে আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর সেবা এখনো পুরোপুরি জেন্ডার-বান্ধব নয়।

অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, পুরুষ ও নারীদের সেবার চাহিদা ভিন্ন, অনেক হাসপাতালে পৃথক ওষুধের কাউন্টার নেই। ইমার্জেন্সি রুমে, ওয়ার্ডে, ওয়েটিং রুমে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান ব্যবস্থা অপ্রতুল ও নারী-পুরুষের জন্য পৃথক টয়লেটেরও অভাব আছে। এমনকি অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্রেস্টফিডিং কর্ণারেরও অভাব রয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবা।

বক্তারা বলেন, নার্সিং পেশায় এবং মেডিকেল শিক্ষায় নারীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, তবে পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবে নারী চিকিৎসকেরা উপজেলায় উপজেলায় গিয়ে কাজ করতে আগ্রহ বোধ করছেন না। স্বাস্থ্যসেবা যারা দিচ্ছেন এবং যারা নিচ্ছেন তারা জেন্ডার বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। এই সমস্যাগুলো সমাধানে আলোচকগণ সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেন।

আলোচকেরা বলেন, স্বাস্থ্য প্রদানকারী ও রোগী উভয়েরই জেন্ডার বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকতে হবে, প্রত্যেকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেন্ডার নীতি থাকা প্রয়োজন। এই নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে জেন্ডার সমতা নিয়ে সংবেদনশীলতা তৈরিতে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

আলোচনায় অংশ নেন বিএসএমএমইউর অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, সহযোগী অধ্যাপক শিউলি চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ. খালেকুজ্জামান, ডা. সাকি খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক মো. হারুন-উর-রশিদ, বিউটি সিকদার, তানিয়া আখতার এবং আইসিডিডিআর, বি এর বিজ্ঞানী ইকবাল আনোয়ার, এম মুশতাক হুসেন, সোহানা শফিক, শাহেদ হুসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেন সহকারী অধ্যাপক হাবিবা রহমান ও আন্তর্জাতিক এনজিও ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড পেরেন্টহুড ফেডারেশনের (আইপিপিএফ) সানজিদা হাসান প্রমুখ।