হেডম্যানদের নিরাপত্তা চান বোমাং রাজা

রাঙামাটির ঘিলাতলী মৌজার হেডম্যান দীপময় তালুকদার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বান্দরবানের বোমাং রাজার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: প্রথম আলো
রাঙামাটির ঘিলাতলী মৌজার হেডম্যান দীপময় তালুকদার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বান্দরবানের বোমাং রাজার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: প্রথম আলো

হেডম্যানদের (মৌজাপ্রধান) জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বান্দরবানের বোমাং সার্কেল প্রধান (রাজা) উ চ প্রু চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী হেডম্যান প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে নিরাপত্তাহীন হলে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে না পারলে আরও বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বোমাং রাজা। বান্দরবান শহরে বোমাং রাজার কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ৩৩৩ নম্বর ঘিলাতলী মৌজার হেডম্যান দীপময় তালুকদারের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গত বুধবার রাজস্থলী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) দীপময় তালুকদারকে (৪৫) অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করে দুবৃত্তরা। উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের তাইতং পাড়ায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। 

রাজস্থলী উপজেলাটি রাঙামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও সার্কেল হিসেবে বান্দরবান বোমাং সার্কেলে পড়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্যগতভাবে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত। বোমাং ছাড়াও অন্য দুটি সার্কেল হলো, চাকমা সার্কেল (রাঙামাটির বেশির ভাগ অংশ) ও মং সার্কেল (খাগড়াছড়ি)। এসব সার্কেল প্রধান বা রাজারা সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায় করেন। এ ছাড়া তাঁরা কিছু সালিসি কাজও করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্নধারার প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনুযায়ী এসব সার্কেল প্রধানের হয়ে হেডম্যান ও কার্বারিরা রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করেন। তাঁরা বিচারিক কাজও করেন।

আজ সংবাদ সম্মেলনে বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী বলেন, মৌজায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত হেডম্যানরা নিজেরা এখন সবাই নিরাপত্তাহীন। স্বাভাবিক কাজকর্মক করতে পারছেন না। অত্যন্ত মেধাবী হেডম্যান দীপময় তালুকদারের হত্যার শিকার হওয়ার পর আতঙ্ক আরও বেশি বেড়ে গেছে। দীপময় তালুকদারের হত্যাকাণ্ডের মতো যাতে আরও ঘটনা না ঘটতে পারে, সে রকম নিরাপত্তা গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।

বেলা ১১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি, রুমাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকেও হেডম্যানরা সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিমংপ্রু চৌধুরী। এতে তিনি বলেন, রাজস্থলীতে দিনদুপুরে নির্মাণাধীন ব্যস্ততম সড়কে দীপময় তালুকদারকে হত্যা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক হেডম্যান তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। দীপময় তালুকদারের হত্যাকারিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।

বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা হেডম্যানরাও তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন। রুমার হেডম্যান লাললিয়ান সম বম বলেন, নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির কারণে অনেক হেডম্যান মৌজায় যেতে পারছেন না। বর্তমান অবনতিশীল পরিস্থিতি সমাধান করা দরকার।
অনুষ্ঠানে সুয়ালক মৌজার হেডম্যান মংথোয়াইচিং মারমা বলেন, বান্দরবানসহ পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত অবনতিশীল। জীবনরক্ষার জন্য সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। রোয়াংছড়ির আলেক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান সাশৈপ্রু চৌধুরী বলেন, হেডম্যানদের ওপর আগে কখনো হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।