মুক্তি চান না জান্নাতুল

মোছা.জান্নাতুল আরজু। ছবি : সংগৃহীত
মোছা.জান্নাতুল আরজু। ছবি : সংগৃহীত

তিন বছর আট মাস পর নিজ জিম্মায় মুক্তি পেলেন মোছা.জান্নাতুল আরজু। চাচার নির্যাতন সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন এতিম এই কিশোরী। এরপর এসে পরেছিলেন বখাটের হাতে। সেখান থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছা বন্দী জীবন বেছে নিয়েছিলেন।

সেই বন্দী জীবনেই ভালো ছিল জান্নাতুল। আদালতের মুক্তির আদেশে খুশি নন বর্তমানে ১৯ বছরের এই তরুণী। তাঁর কাছে মুক্তি মানেই পরিবারের কাছে ফেরা। আবার সেই নির্যাতন।

জান্নাতুল পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মৃত আবুল কালাম আজাদের মেয়ে। তাঁর মায়ের নাম তারা বানু। বাড়িতে এক চাচা ছাড়াও আছে সৎ মা ও দুই বোন।

জান্নাতুল আরজু প্রথম আলোকে বলেন, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তাকে দেখার কেউ ছিল না। এক চাচা ছিল। তার নাম কোডল। কারণে অকারণে মারধর করত। তার নামে দোতলা একটি ঘর ছিল। তাঁর অভিযোগ, ‘আপনি বলেন, আমি ছোড মানুষ টাকা কোথায় পামু। চাচার নির্যাতন সইতে না পেরে পালাইয়া আসি। এখন আমারে মুক্তি দিছে আমি কোথায় যাব?’

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড-এর কর্মকর্তা ও সহকারী জজ আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিনা বিচারে জান্নাতুল আরজুর আটক থাকার বিষয়টি জানার পর ২৮ অক্টোবর তাকে জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করা হয়। জান্নাতুল আরজুকে আদালত নিজ জিম্মায় মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।

আলমগীর হোসেন বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জান্নাতুল আরজুর দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জান্নাতুলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আদালতে নথিপত্র অনুযায়ী ২০১৬ সালে ঢাকায় পালিয়ে আসে। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর।

জান্নাতুল বলেন, ঢাকায় এসে বখাটে ছেলের খপ্পরে পরেন। সেই উৎপাত থেকে বাঁচতে পুলিশের কাছে যান। এরপর আদালত তাকে ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাজিপুরের কোনাবাড়ির কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, তেজগাঁও থানা-পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে আরজুকে প্রথম দিন ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন রাখা হয়। অধর্তব্য অপরাধে পরদিন ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে হাজির করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ। তবে জান্নাতুল আদালতেও পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরতে অস্বীকৃতি জানায়। জান্নাতুল নাবালক হওয়ায় আদালত তাকে গাজিপুরের কোনাবাড়ির কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকেই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে আছেন।

চলতি মাসে প্যারা লিগ্যাল এইড-ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইডকে বিনা বিচারে জান্নাতুল আরজুর আটক থাকার বিষয়টি জানায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ ও শিশু আদালতে জান্নাতুলকে জিম্মায় নেওয়ার জন্য আবেদন করেন ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী সুলতানা রাজী। বিচারক সহিদুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর ভিকটিম জান্নাতুল আরজুকে নিজ জিম্মায় মুক্তির নির্দেশ দেন।