পাবনা হাসপাতাল: বিদ্যুৎ ছাড়া আরও সাত দিন

বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোনের টর্চ জ্বালিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক। গত সোমবার রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো
বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোনের টর্চ জ্বালিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক। গত সোমবার রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গত রোববার বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রধান সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে সংযোগের তার ও সার্কিট। এতে তিন দিন ধরে হাসপাতালটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি সেবা দিতে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বসানোর কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিকল্প বিদ্যুৎ–ব্যবস্থায় এসির সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। মূল সরবরাহ লাইন ঠিক হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির বিদ্যুৎ সরবরাহ দেখভাল করে জেলা গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগ। এ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রোববার সকালে হঠাৎ করেই সংযোগের তার ও মূল সার্কিটটি পুড়ে যায়। এতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচারকক্ষ (ওটি) এবং নতুন ও পুরাতন দুটি ভবনের সব কক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সোমবার রাতে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পুরোনো ভবনে বিকল্প ব্যবস্থায় কক্ষের বাতি জ্বলছে। তবে নতুন ভবনের মেডিসিন ও গাইনি বিভাগ পুরোপুরি অন্ধকার। বিদ্যুৎ–বিহীন হয়ে পড়েছে জরুরি বিভাগও। অন্ধকারের সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চিকিৎসক ও রোগীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি দলকে হাসপাতাল ছেড়ে বাইরে অবস্থান করতে দেখা যায়। মুঠোফোন ও মোমবাতির আলোয় রোগীদের দেখভাল করছেন নার্সরা।

চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন জিল্লুর রহমান জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় আলোর পাশাপাশি হাসপাতালে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গরমে অসুস্থ রোগীরা ছটফট করছে। 

ইন্টার্ন চিকিৎসক জয়দেব সূত্রধর বলেন, বৈদ্যুতিক পাখা না চলায় হাসপাতালের ওয়ার্ড ও কক্ষগুলোতে অসহ্য গরম। চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের অনেকেই হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছেন। ভেতরে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ।

গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে প্রায় ৪৫টি এসি চলে। এর মধ্যে ৫টি অস্ত্রোপচারকক্ষে ১০টি, সিসিইউ বিভাগে ৬টি, এক্স-রে মেশিন কক্ষে ৩টি, ডেন্টাল বিভাগে ২টি, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন কক্ষে ২টি, পরিচালকের কক্ষে ২টি, ব্লাড ব্যাংক, কম্পিউটার ল্যাব ও প্যাথলজি বিভাগে ১টি করে ২৮টি এসি সরকার অনুমোদিত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অপরিকল্পিতভাবে চিকিৎসকদের কক্ষসহ বিভিন্ন কক্ষে আরও ১৭টি এসি চালু করা হয়েছে। এতে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তার ও সার্কিট পুড়ে গেছে।

হাসপাতালের পরিচালক রঞ্জন কুমার দত্ত বলেন, অনেকটা অগোচরেই অতিরিক্ত এসি চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আর গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার আরিফুজ্জামান বলেন, আপাতত জরুরি ছাড়া সব এসির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও মূল সরবরাহ লাইন ঠিক হতে অন্তত আরও সাত দিন সময় লাগবে।