ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ডে অন্তরীণ শিশুদের মুক্তির নির্দেশ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া দণ্ডে যশোর ও টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অন্তরীণ ১২ বছর বয়সের নিচের শিশুদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। টঙ্গী ও যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ১২ বছরের ঊর্ধ্ব থেকে ১৮ বছর বয়সী অন্তরীণ শিশুদের হাইকোর্ট ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার শিশু আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে এদের মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত যেসব মামলায় এসব শিশুদের দণ্ড দিয়েছে, সেসব মামলার নথি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে আলাদা-আলাদাভাবে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আজ রুলসহ এই আদেশ দেন। শিশু অধিকার বিষয়ক ওই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ জানানো হয়।

রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুদের দেওয়া দণ্ড ও আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, র‍্যাবের মহাপরিচালক, টঙ্গী ও যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম, র‍্যাব-৩ টিকাটুলির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান, র‍্যাব-৪ মিরপুর-১-এর আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আগামী ১৮ নভেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রাখা হয়েছে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আজ সকালে হাইকোর্টের নজরে এনে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল হালিম ও ইসরাত হাসান। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে স্পষ্টই বলা আছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত থাকা শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দণ্ড দিয়ে চলেছেন। এ মুহূর্তে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২১টি শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের দণ্ড দিয়েছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছে।

শিশু আইনের পাশাপাশি হাইকোর্টের একাধিক রায়েও বলা হয়েছে, শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতেই হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূরের কথা, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারক শিশুদের বিচার করলেও তা হবে বেআইনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের ৩ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১টি শিশু সেখানে রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী আছে ২৮ জন। ২৬ জনের বয়স ১৬,২০ জনের বয়স ১৫,১৬ জনের বয়স ১৪,১১ জনের বয়স ১২। ৭ জনের বয়স ১৩। বাকি ১২ জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। একজনের বয়স উল্লেখ নেই।

এ ছাড়া যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত একটি শিশু আছে।