সেই শক্তির কাছাকাছি এসে গেছি: ড. কামাল

জেএসডির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
জেএসডির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণের ঐকমত্য থাকলে কোনো শক্তি তার সামনেই দাঁড়াতে পারে না। তারা সেই শক্তির কাছে চলে এসেছেন বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই সবাইকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণের যেখানে ঐকমত্য আছে সেই ঐকমত্যের সামনে কোনো শক্তি দাঁড়াতে পারেনি। বন্দুক নিয়ে, কামান নিয়ে কোনো কিছু দাঁড়াতে পারেনি। বাঙালিরা যখন ঐকমত্যে আসে সেই শক্তি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তির কাছাকাছি আমরা এসে গেছি।’

স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললেও দেশে নানান বৈষম্য আছে উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানে আছে সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে, সুশাসনের বাতাস বইবে, অর্থনীতি জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হবে, মানুষে মানুষে, গ্রাম শহরে বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে পরেও দেশে এ রকম বৈষম্য থাকবে তা তিনি কোনো দিন ভাবতে পারেননি বলে জানান।

ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর যখন হবে তখনো কি আমরা চাইব না যে মুক্তিযোদ্ধাদের যে স্বপ্ন, যে স্বপ্ন দেখে মানুষ জীবন দিয়েছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটাই মানুষ দেখতে চায়।’

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও মানুষের রায়ের নির্বাচন হয় না বলে জানান কামাল হোসেন। তিনি স্বাধীনতার ৫০ বছরকে সামনে রেখে সবাইকে জেলায় জেলায় মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করতে হলে ৫০ বছর হওয়ার আগেই সংগঠিত হয়ে ইতিবাচক আন্দোলন ও শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আন্দোলন করার কথা জানান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললেও সেই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাকশালের মতো একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে সরকার গণতন্ত্রের মুখোশ পরে। ভিন্নমতকে তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই সরকারকে সরাতে হবে। তা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁর স্বাস্থ্য এত খারাপ, তাঁর অসুখ এত বেড়েছে, সেটাকে গোপন করে পিজির (বিএসএমএমইউ) পরিচালক স্টেটমেন্ট দিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, তাঁর শরীর এত খারাপ হয়েছে যে তিনি এখন নিজে উঠে দাঁড়াতে পারেন না। তিনি চেয়ারে ঠিকমতো বসতে পারেন না। নিজের খাবার নিজে খেতে পারেন না।’ খালেদা জিয়াকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এসব হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

২৬ লাখ বিএনপির নেতা কর্মী মামলায় জড়িত এবং অনেককে হত্যা, পঙ্গু ও আহত করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক কোনো দেশে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে এত বড় মূল্য দিতে হয় না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে পরাজিত করার আহ্বান জানান ফখরুল।

কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আপনি আন্দোলনের ডাক দেন। আমরা আন্দোলন করব। তিনি বলেন, জাতীয় সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত জেএসডির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জেএসডির ইতিহাস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানান, বর্তমান সরকার ইতিহাস বিকৃত করছে। শুদ্ধি অভিযানে যাদের ধরা হচ্ছে সবই লীগের উল্লেখ করে বলেন, আর কোনো দল এখানে নেই। দুর্নীতি সব আওয়ামী লীগেই হচ্ছে। আসল দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে না।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, জাতীয় পার্টির (জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামান হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল আমীন ব্যাপারী প্রমুখ।