একসঙ্গে চার সন্তান, বেঁচে আছে তিনটি

একসঙ্গে ভূমিষ্ঠ হওয়া চার সন্তানের মধ্যে বেঁচে আছে তিনজন। ছবি: সংগৃহীত
একসঙ্গে ভূমিষ্ঠ হওয়া চার সন্তানের মধ্যে বেঁচে আছে তিনজন। ছবি: সংগৃহীত

ছয় বছরের দাম্পত্যজীবনে এবারই প্রথম সন্তান জন্ম দিয়েছেন আকলিমা বেগম। একটি বা দুটি নয়, আকলিমার গর্ভ থেকে একসঙ্গে চারটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তবে চার সন্তানের মুখ থেকে মা ডাক শোনার সৌভাগ্য হবে না তাঁর। গর্ভে থাকতেই যে মারা গেছে এক সন্তান।

গত ২৭ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখে নবজাতকগুলো। জীবিত তিন নবজাতকের মধ্যে দুটি মেয়ে ও একটি ছেলেশিশু। জন্মের আগেই মারা যাওয়া শিশুটিও ছেলে ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

নবজাতকদের বাবা আশরাফুল ইসলাম পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। স্ত্রী আকলিমা গৃহিণী। আশরাফুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কুমেতপুর গ্রামে। ছয় বছর আগে বিয়ে হয় আশরাফুল ও আকলিমার। কাজের সূত্রে তাঁরা গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার বোর্ডবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

আশরাফুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাকে স্থানীয় একজন গাইনি চিকিৎসক দেখাই। কিছুদিন পর চিকিৎসকেরা জানান, স্ত্রীর পেটে নাকি একসঙ্গে চারটি বাচ্চা। স্ত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন তাঁরা। গত ২৬ অক্টোবর রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেলে এনে তাঁকে ভর্তি করি। পরদিন ভোরে সিজার (অস্ত্রোপচার) করে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।’

তবে সন্তানেরা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাদের নিয়ে প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে আশরাফুলকে। আশরাফুল বলেন, ‘ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই চিকিৎসকেরা জানান, শিশুদের দ্রুত নবজাতক নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি করা প্রয়োজন। ঢাকা মেডিকেলের নবজাতক বিভাগে সিট খালি না থাকায় তাদের দ্রুত যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে দুই দিন রাখার পর জানতে পারি, বিল হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। পরে ঋণ নিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে সন্তানদের আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। পরদিন হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কাছে গিয়ে আমার সন্তানদের বাঁচানোর অনুরোধ জানাই। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর একটি সিট খালি হলে সেখানে বাচ্চাদের রাখা হয়। এখন আমার বাচ্চারা নবজাতক বিভাগে ভর্তি আছে।’ সন্তানদের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। সন্তানদের দেখভালের জন্য আর্থিক সাহায্যও প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতকদের বাবা আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু তখন সিট ফাঁকা ছিল না। পরে সিট ফাঁকা হলে তাদের নবজাতক বিভাগে ভর্তি করা হয়। নবজাতকেরা আগের চেয়ে ভালো আছে। চিকিৎসকেরা তাদের ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তবে এনআইসিইউ থেকে বের না করা পর্যন্ত তাদের আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।’