বাক্স্বাধীনতাহীন জীবন পশুর জীবন, আলোচনায় বক্তারা

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি ‘হুমকির মুখে বাক্‌স্বাধীনতা’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছবি: ফোকাস বাংলা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি ‘হুমকির মুখে বাক্‌স্বাধীনতা’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রশ্নহীন সমাজ মৃত সমাজ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে, সমাজ শেষ হওয়ার পথে। চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণেও আইন করা হয়েছে। বাক্‌স্বাধীনতা না থাকলে অন্য কোনো স্বাধীনতা থাকে না, সে জীবন পশুর জীবন হয়ে যায়।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি ‘হুমকির মুখে বাক্‌স্বাধীনতা’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, বাক্‌স্বাধীনতা না থাকলে জীবন পশুর জীবন হয়ে যায়। সামন্ত যুগের আইনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপরাধের ধারা ছিল। ১৮৫০ সাল নাগাদ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে এ বিষয় বিশ্বের প্রায় সব জায়গার আইন থেকে ওঠে গেছে। এটি দেওয়ানি বিষয়। কিন্তু এ দেশে একের পর এক বিভিন্ন আইনে ভাবমূর্তির বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে। এটি মূলত করা হয় বাক্‌স্বাধীনতা রোধ করার জন্য। দেশ রাজা-বাদশার যুগে ফিরে যাচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে সমাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পথে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে বাক্‌স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, শাসকগোষ্ঠীর বাক্‌স্বাধীনতা আছে। তারা বাক-সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ড. কামাল হোসেনদের বিরুদ্ধে যা খুশি বলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাক্‌স্বাধীনতা প্রশ্নে দেশ উত্তর কোরিয়ার পথে যাচ্ছে। স্বাধীন দেশে পরাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা যন্ত্রণার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক সি আর আবরার বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অধিকার। এটি কারও দান নয়। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই আইনে এখন পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর মধ্যে ৮ জন সাংবাদিক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, যুগে যুগে চিন্তাকে আটকে দেওয়া হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সব জায়গায় শাসকদের কঠোর সমালোচনা হয়। এর মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র টিকে থাকে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা এলে সেটা রাজনৈতিক ব্লাসফেমি। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করা হয়েছে মত প্রকাশের জন্য। তর্কহীন, প্রশ্নহীন সমাজ মৃত সমাজ। নিজেদের বাঁচার জন্য, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান স্তম্ভ বাক্‌স্বাধীনতা। বাক্‌স্বাধীনতা না থাকলে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ হয় না।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সেলফ সেন্সরশিপ ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। কোথাও আর সমালোচনা করার জায়গা নেই। তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু তার সবকিছুই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। সে আইনে চিন্তা করার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।