সরকার জনগণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

তাঁর সরকার জনগণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি উভয়ই ব্যাংক এর সুবিধা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনগণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি এবং তাঁরা বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যাংক ব্যবহার করছে। যেমন ভর্তি (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে), স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি এবং গৃহ নির্মাণকাজে।’ রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংক উভয়ই এর থেকে সুবিধা পাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক’স (বিএবি) কর্তৃক তাঁর ত্রাণ ভান্ডারে প্রদত্ত কম্বল গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিএবি’র আওতাধীন ৩৬টি ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ এবং কল্যাণ তহবিলে ২৭ লাখ পিস কম্বল অনুদান হিসেবে প্রদান করে।

জনগণের কল্যাণ করাই তাঁর লক্ষ্য পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য কাজ করার সময় তিনি ক্লান্তিবোধ করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যখন জনগণের জন্য কাজ করি তখন আমি ক্লান্ত হই না, যদি জনগণ ভালো থাকে তবে সেটা আমার বড় অর্জন’। বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংক নিয়ে বিভিন্ন কথা লেখা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে যাদের ধারণা আছে তারা এত বেশি লিখবেন না। এটাও ঠিক যে, অনেকে অনেক উদ্দেশ্য নিয়ে লেখেন।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন,‘আমি বলব যে, এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আপনারা যেহেতু অনেক বেশি কাজ করেন, তাই জনগণের আপনাদের কাছে প্রত্যাশা বেশি। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই এবং যদি আপনি সৎভাবে ব্যাংকগুলো পরিচালনা করেন,তবে কোনো সমস্যা হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শাখা খোলা বাধ্যতামূলক করেন। সেই সঙ্গে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) বাস্তবায়ন করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আগে কখনো এই পদ্ধতি ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মহল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অলাভজনক শাখা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক এই জাতীয় প্রেসক্রিপশন দিয়েছিল। কিন্তু আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি তখন আমরা প্রেসক্রিপশনটি গ্রহণ করি নাই, কারণ সমস্ত অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সমান নয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, যেসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেশি, ব্যাংকগুলো সে অঞ্চলে মুনাফা অর্জন করবে এবং যেসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কম রয়েছে সেখানে মুনাফা করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমি পুরো বিষয়টা নিয়েই হিসেব করব। কাজেই আমি ব্যাংকগুলো কেন বন্ধ করব বরং আমি ব্যাংকের ব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষা দেব। আর এ জন্যই আমরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছি।’

বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সিএসআর কর্মসূচির আওতায় সহযোগিতার হস্তকে প্রসারিত করায় প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার বিপন্ন মানবতার জন্য সহযোগিতা দিচ্ছে। কিন্তু আপনারা এগিয়ে এলে তাঁরা আরও বেশি লাভবান হবে।’ দেশের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমশ উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য আর কোনো সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিন এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তা করে যেতে পারেননি। তবে, আমি তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়েছি।’

বিগত প্রায় এক দশকে বাংলাদেশের চমকপ্রদ উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি এখন আন্তর্জাতিকভাবেও ভীষণ শক্তিশালী, এখন আর কেউ বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং এখন ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কথা মাথায় রেখে এবং সর্বোপরি আগামী প্রজন্মের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ‘ডেলটা পরিকল্পনা’ও গ্রহণ করেছে।

অনুষ্ঠানে বিএবি চেয়ারম্যান জানান, আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজ নিজ ব্যাংকে একটি ‘মুজিব কর্নার’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিএবি রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং একই সঙ্গে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদ্‌যাপনেও ব্যাপক অনুষ্ঠানমালা হাতে নিয়েছে।’

অনুষ্ঠানে ডাচ বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে কম্বল কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। বিএবি’র সদস্য ৩৬টি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী গত সাধারণ এবং উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালীন নিহত আনসার ও ভিডিপি’র পরিবারের সদস্য এবং দলের কিছু নেতা-কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।