চিকিৎসালয় দখল করে গুদাম

যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্র দখল করে তৈরি করা হয়েছে গুদাম। গতকাল রাজধানীর টিকাটুলীতে।  ছবি: প্রথম আলো
যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্র দখল করে তৈরি করা হয়েছে গুদাম। গতকাল রাজধানীর টিকাটুলীতে। ছবি: প্রথম আলো

টিকাটুলীর যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্র দখল করে গুদাম বানিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু। র‌্যাব তাঁকে আটকের পর শুক্রবার রাতের আঁধারে যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্রের মূল ফটকে ইটের দেয়াল তৈরি করেছেন শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রমের অনুসারীরা। এ নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই আশ্রমের অনুসারী ও ময়নুলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

 টিকাটুলীর কে এম দাস লেনের প্রায় সাড়ে চার বিঘা জায়গায় রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা ত্রাণ ও পুনর্বাসন সমিতির (এনটিআরএস) দাতব্য চিকিৎসালয়। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, গত ২৫ বছরে এখানে চিকিৎসার কোনো কার্যক্রমই পরিচালিত হয়নি। সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুদাম। এসব করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে আটক করেছে র‍্যাব। তাঁকে আটকের পর টিকাটুলীর বিভিন্ন মহল্লায় আনন্দমিছিল করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।

গতকাল শনিবার ওই জমির মালিকানা দাবি করে তা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন চিকিৎসালয় লাগোয়া শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রমের অনুসারীরা। শুক্রবার রাতেই তাঁরা চিকিৎসালয়টিতে প্রবেশের মূল ফটকে ইটের দেয়াল তৈরি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া চিকিৎসালয় ও আশ্রমের মধ্যে থাকা একটি সীমানাদেয়ালও ভেঙেছেন। আশ্রমের ট্রাস্টি জে কে পল দাবি করেছেন, এই জমি দেবোত্তর সম্পত্তি। ময়নুল হক অবৈধভাবে তা দখল করে রেখেছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল শনিবার সকালে আশ্রমের লোকজন ওই জায়গা দখলমুক্ত করতে গেলে ময়নুল হকের অনুসারীদের সঙ্গে হট্টগোল বাধে। পরে ওয়ারী থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গতকাল দিনভর সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, যে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে, তা রাতের অন্ধকারে করা হয়েছে। এই জায়গার মালিকানা নির্ধারণ করবেন আদালত। তাঁরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এনটিআরএসের জায়গাটিতে একটি দোতলা ভবন ও পৃথক চারটি একতলা ভবন রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, দোতলা ভবনটি এনটিআরসির হলেও বাকি চারটি ভবন ময়নুল তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দোতলা ভবনটির কোনো কক্ষেই চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। নিচতলা থেকে শুরু করে দোতলার প্রায় প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে গুদাম। এর মধ্যে নিচতলায় একটি বাণিজ্যিক অফিস রয়েছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড নেই। পাশে কাগজপত্রের একটি গুদাম দেখা গেছে। আর দোতলায় একটি কক্ষে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ব্যানারে রাখা হয়েছে। আরেকটি বড় কক্ষে জুতা প্যাকেটজাত করার কাজ চলছে। দুটি কক্ষে লোকজন রাতে থাকেন। দোতলার ছাদে ‘অবদান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এ ছাড়া আছে ময়নুলের ব্যক্তিগত একটি কার্যালয়। দোতলা ভবনটির পশ্চিম দিকে নিচতলা ও দোতলায় স্থায়ীভাবে লোকজন বসবাস করছেন। পুরো ভবনটির কোথাও চিকিৎসকের চেম্বার দেখা যায়নি।

দোতলা ভবন ছাড়াও এনটিআরএসের সীমানায় যে চারটি ভবন রয়েছে, এর মধ্যে একটিতে ব্রহ্মপুত্র প্রিন্টিং প্রেস ও অন্যটিতে নাসির প্রিন্টিং নামের দুটি ছাপাখানার কাজ চলছে। বন্ডেড ওয়্যার হাউস ও এম এস মর্ডান ইন্ডাস্ট্রিজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের ভবনে তালা ঝুলছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।

নাসির প্রিন্টিংয়ের কর্মকর্তা মোমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ওই ভবনের তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি মাসে ময়নুলকে ভাড়া দেন। তবে মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। আশ্রমের লোকজন তাঁদের ওই জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছেন।

শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্টের ট্রাস্টি রয়েছেন ১১ জন। তাঁদের একজন জি কে পল প্রথম আলোকে বলেন, এই সম্পত্তির মালিকানা তাঁদের। যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন তাদের অনুসারীরা এটি দখলে রাখার চেষ্টা করেছেন। জমির মালিকানা ফিরে পেতে তাঁরা আদালতে গেছেন।