গাজীপুরে থেমে নেই অবৈধ গ্যাস-সংযোগ

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতাধীন গাজীপুরে থেমে নেই অবৈধ গ্যাস-সংযোগ। কর্তৃপক্ষ অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবু এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় দালাল চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাসাবাড়িতে নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ।

গাজীপুর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, গত অক্টোবর মাসে একাধিক অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ১০ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। জরিমানা করাসহ থানায় মামলাও করা হয়েছে। অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে প্রভাবশালী একটি চক্র জড়িত। চক্রটির বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থক। তাঁদের ধারণা, গাজীপুরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় এখানে বাড়ি ভাড়ার ব্যবসা খুবই ভালো। যে বাড়িতে গ্যাস আছে, সেই বাড়ির চাহিদাও অনেক বেশি। গাজীপুরের কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকার রিপন হোসেন বলেন, তাঁদের বাড়িতে বৈধভাবেই অনেক আগে থেকে গ্যাস আছে। এ কারণে তাঁদের বাসার ঘর খালি থাকে না। কিন্তু যাঁদের বাসায় গ্যাস নেই, তাঁদের বাড়ির চাহিদা কম।

এলাকার এক বাড়ির মালিক বলেন, তাঁর একটি কলোনি বাড়ি রয়েছে। তাতে ৮০টি ঘর আছে। ঘরগুলো গ্যাস ছাড়া ভাড়া দিয়েছিলেন দুই হাজার টাকা করে। দেড় লাখ টাকা খরচ করে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ নিয়েছেন। এখন প্রতিটি ঘর ভাড়া দিচ্ছেন তিন হাজার টাকা করে।

গাজীপুরের লস্করচালা এলাকার একটি চক্র প্রশাসনকে হাত করে অবৈধ গ্যাস-সংযোগের কাজ করছে। কাশিমপুর মৌজার লস্করচালা এলাকায় গত কয়েক দিনে রাতের আঁধারে তিন শতাধিক বাড়িতে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

এক মাস আগে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকায় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ থেকে ওই এলাকার কলেজের একটি কক্ষে আগুন লাগে। সংবাদ পেয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে এলাকার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ওই ঘটনায় সরকারি কাজে বাধাদান, হুমকি প্রদান, অবৈধ গ্যাসলাইন স্থাপন ও ব্যবহারের অভিযোগে গাজীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গাজীপুর আঞ্চলিক বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অজিত চন্দ্র দেব। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, আসামিরা ভাওয়াল মির্জাপুর ও আশপাশের কিছু এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাসলাইন স্থাপন করে প্রায় ১ হাজার ২০০ গ্রাহককে গ্যাস সরবরাহ করছেন। মোশারফ হোসেন ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন একই এলাকার লুৎফর রহমান, শাহজাহান সিরাজ, মতিউর রহমান, রেজাউল করিম, প্রিন্স বাবুল ও স্বপন মিয়া।

মোশারফ হোসেন জানান, তিনি অবৈধ গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। চক্রান্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার এক বাড়িওয়ালা জানান, তিনি পাঁচতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করে গ্যাসের জন্য ভাড়া দিতে পারছিলেন না। পরে অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ নেন। গ্যাস-সংযোগ নেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি ভাড়া হয়ে যায়।

সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর তিতাস কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড এলাকার একটি খাবার হোটেল ও একটি বাসার মালিককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড এলাকায় একটি অসাধু মহল দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে আসছিল। ওই এলাকার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে সংযোগ দেওয়া অবৈধ লাইন উচ্ছেদ করা হয় এবং বিভিন্ন ব্যাসার্ধের পাইপ তোলা হয়। এতে এলাকার ২০০ বাসাবাড়ির ১ হাজার ৫০০ চুলার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গী, বোর্ডবাজার, কাশিমপুর, লস্করচালা, সুরাবাড়ি, বাঘবাড়ি মাদ্রাসার আশপাশের এলাকা, নেয়ামত সড়ক, মারিয়ালী, চাপুলিয়া, পুবাইল, গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর, হায়দরাবাদ, কোনাবাড়ি, আমবাগ, শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ কেওয়া, ভাংনাহাটি এলাকায় কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসপাইপ থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস দেওয়া হচ্ছে।

গাজীপুর তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক অজিত চন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান চলমান। এ অভিযানে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় শত শত অবৈধ গ্যাসলাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কয়েক হাজার ফুট পাইপ জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।