অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫, ছাত্রলীগ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে মামলা দায়েরের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৫ জনকে আটক করে চন্দ্রিমা থানা-পুলিশ। আজ রোববার সকালে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখায়।

তবে এ ঘটনায় পুলিশ এখনো মূল অভিযুক্ত পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন ওরফে সৌরভকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গতকাল রাতে মহানগর ছাত্রলীগের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

চন্দ্রিমা থানা-পুলিশ জানায়, অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ শনিবার রাতে ছাত্রলীগের সাতজন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় রাতেই পুলিশ নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৫ জনকে আটক করে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে রোববার সকালে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আজ সকালে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পর তাদের আদালতে পাঠানো হবে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

এ ঘটনায় শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সভায় যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন ওরফে সৌরভকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। কামাল হোসেন ও তার সহযোগীরা ঘটনার পর থেকে পলাতক।

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনার সঙ্গে কামালের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে বহিষ্কারের জন্য ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি কল্যাণ কুমার জয়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে আরও কারও বিরুদ্ধে ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনায় ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন। আজ সকালে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টায় তারা ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করেন। এতে তাঁরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের দ্রুত বিচার, তাঁদের স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল, ইনস্টিটিউটে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

গতকাল সকালে উপস্থিতি কম থাকা দুজন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে না পারায় অধ্যক্ষের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। দুপুরে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন তরুণ তাঁর হাত ধরে টেনে ও ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে ফেলে দেন। পরে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে তোলেন।