মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ভেসে উঠেছে মরা মাছ

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ছবি: প্রথম আলো
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানিতে পাহাড়ি বামাস মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠেছে। এতে জলপ্রপাত এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। জলপ্রপাতের পানিতেও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে এই মাছ মারা যেতে দেখা গেছে।

মাছ মারা যাওয়ার কারণ এখনো জানা যায়নি। পানি পরীক্ষা করে কোনো ধরনের রাসায়নিকজাতীয় বিষ পাওয়া যায়নি।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক, বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে পর্যটক, পর্যটক পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন মাধবকুণ্ডের ছড়ার পানিতে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী ভেসে উঠতে দেখেন। মৃত মাছের কারণে মাধবকুণ্ড পর্যটন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জলপ্রপাতের পানিতেও দুর্গন্ধ রয়েছে। মৃত জলজ প্রাণীর মধ্যে ছিল পাহাড়ি বামাস মাছ, কাঁকড়া, পুঁটি, ব্যাঙ, পাহাড়ি চিংড়ি, শুকনো জায়গায় বিচরণে সক্ষম পাহাড়ি মাছ পিপলা, ছোট বাইন, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ কীটপতঙ্গ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মারা যাওয়া বামাসের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হতে পারে।

দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ও মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মীরা মরা মাছ পানি থেকে তুলে সরিয়ে নেন। আজ সোমবারও বেশ কিছু মরা কাঁকড়া, বাইন, ব্যাঙ, পুঁটি, বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পানিতে ভেসে ওঠা মরা মাছের সংখ্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে।

স্থানীয় লোকজনের ধারণা, পাহাড়ি ছড়ায় অনেক ধরনের মাছ থাকে। এই মাছ ধরার জন্য মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের ওপরের অংশে উজানে কেউ বিষ প্রয়োগ করতে পারে। ওপর থেকে গড়িয়ে পড়া জলপ্রপাতের পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে।

পর্যটক মাহবুবুর রহমান গতকাল সোমবার বলেন, ‘কুণ্ডের পানিতে নেমেছি। কিন্তু পানিতে গন্ধ ছিল।’

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকার পেশাদার আলোকচিত্রী জুয়েল আহমদ বলেন, ‘গত শনিবার এসে পানির মধ্যে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখি। এ পানি হাকালুকি হাওরে যাবে। হাকালুকিতে মাছ মরবে। সেখানে লোকজন মাছ ধরবে। এই পানি অনেকে খেয়ে থাকে। এতে শুধু মাছ না, মানুষ ও পশুপাখিরও ক্ষতি হবে।’

মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মী সামির আহমদ বলেন, ‘গত শনিবার সকালে এসে দেখছি মাছ মরা। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাই মাছ তুলে ফেলেছি। সেদিন (গত শনিবার) নয়টা মরা বামাস মাছ তুলেছি। এ ছাড়া কাঁকড়াসহ বিভিন্ন ধরনের অনেক মাছ ছিল।’

বড়লেখা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি আজ জেনেছি। এরপরই লোক পাঠিয়েছি। মাছ মরার কারণ বলা যাচ্ছে না। তবে পানি পরীক্ষা করে দেখা গেছে পানির মান স্বাভাবিক আছে। পানিতে কোনো সমস্যা নেই। পানিতে রাসায়নিক জাতীয় বিষ পাওয়া যায়নি। ধারণা করছি একজাতীয় বিষলতা আছে। বিষলতা পিসে কেউ রস প্রয়োগ করে থাকতে পারে, যেটাতে মাছ মারা যেতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে কিছু ওষুধ দিব। যাতে পানিতে বিষের প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়। আর মাছ মারা যাবে না।’

বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন রায় গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, মাছ মরার কারণ জানতে অনুসন্ধান চলছে।’