নবগঙ্গার জায়গায় যুব ভবন

চুয়াডাঙ্গায় নবগঙ্গা নদীর বুক দখল করে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (যুব ভবন) গড়ে ওঠায় খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। জেলা নদী রক্ষা কমিটির অক্টোবর মাসের সভায়ও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। 

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দাবি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই জমির মালিকদের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে ভবন তৈরি করা হয়। তবে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, নবগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও প্রবাহ নিশ্চিত করতে যুব ভবনটির যতটুকু অংশ ভাঙার প্রয়োজন, তা ভাঙা হবে। 

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন-৩ শাখার উপসচিব এ এইচ এম আনোয়ার পাশা গত ২০ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসকদের কাছে অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদের বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। 

এর আগে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসন ও পাউবোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে ৬৪ জেলার নদ-নদী, খাল, ছড়াসহ অন্যান্য সরকারি জলাধার তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা/দখলের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। নবগঙ্গা নদীর পুরোটাই পড়েছে সদর উপজেলায়। উপজেলার খেজুরা, আলিয়ারপুর, মর্তুজাপুর ও দশমী গ্রামের মাত্র ২৬ ব্যক্তিকে দখলদার হিসেবে দেখানো হয়। নদীতীরবর্তী লোকজন এই তালিকাকে দায়সারা বলে মন্তব্য করেছেন। ওই তালিকায় যুব ভবন ও আশপাশের এলাকার কারও নামই উল্লেখ করা হয়নি। পাউবোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরের ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় চুয়াডাঙ্গার চারটি শাখানদী পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব নদী খননে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা প্রাক্কলন ধরে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ টাকায় ঠিকাদার চূড়ান্ত করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্রে অংশ নিয়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত দরদাতা নির্বাচিত হলেও স্থানীয়ভাবে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা নদী পুনঃখননের কাজগুলো করছেন। 

কুষ্টিয়া শহরের এমএ রহিম রোডের মো. নাসির উদ্দিন মোল্লা ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭০০ টাকায় ঠিকাদার হিসেবে চূড়ান্ত নির্বাচিত হলেও কাজটি করছেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুদ্দোহা মালিক। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার গত ১৪ সেপ্টেম্বর নবগঙ্গা নদীর উৎসমুখের কাছাকাছি ঘোড়ামারা সেতু এলাকায় নদী পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করেন। 

খননকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. পলাশ মিয়া জানান, নদীর বুকজুড়ে যুব ভবন রয়েছে। যুব ভবন এলাকায় খননের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় মাঝখানে একটি বড় অংশ বাদ রেখেই খননকাজ চালাতে হচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গার নুরনগর-জাফরপুরে নবগঙ্গা নদীর বুকে যুব ভবন।  প্রথম আলো
চুয়াডাঙ্গার নুরনগর-জাফরপুরে নবগঙ্গা নদীর বুকে যুব ভবন। প্রথম আলো

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে নুরনগর-জাফরপুর এলাকায় দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কাগজপত্র অনুযায়ী জমির মালিকদের প্রায় দেড় কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর সেখানে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমির উন্নয়ন ও যুব ভবন তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির উদ্বোধন করেন। 

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক মাসুম আহম্মেদ বলেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোলানাথ দে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মল্লিক সাঈদ মাহবুব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করেই জমি অধিগ্রহণ করেন এবং জমির মালিকদের টাকা পরিশোধ করেন। পাউবো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, নদীর জায়গায় সরকারি-বেসরকারি কোনো স্থাপনাই থাকবে না। 

জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, নদী পুনরুদ্ধার ও প্রবাহ সচল করতে যা যা করার, সবই করা হবে।