নান্দাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবেদনবিদ নেই, সেবা বন্ধ

অবেদনবিদের (অ্যানেসথেটিস্ট) পদ শূন্য থাকায় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি প্রসূতিসেবা বিভাগের (ইওসি) অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে দরিদ্র প্রসূতিদের মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে জেলা পর্যায়ে গিয়ে এ সেবা নিতে হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে।

২০০৩ সালের ৪ আগস্ট একটি বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম (ইওসি) চালু হয়। তখন কমপ্লেক্সের দুজন চিকিৎসককে শল্য (সার্জিক্যাল) ও অবেদন (অ্যানেসথেসিয়া) বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কার্যক্রম শুরুর উদ্দেশ্য ছিল গ্রামাঞ্চলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দাতা সংস্থার অর্থায়নে ইওসি কার্যক্রমটি চালু থাকে। পরে সেটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ইওসিতে প্রথম শল্যবিদ হিসেবে কাজ করেছেন ওই সময়ের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক মো. তাজুল ইসলাম খান। তিনি এখন পদোন্নতি পেয়ে নেত্রকোনার সিভিল সার্জন হয়েছেন। আর অবেদনবিদের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মো. আবদুল মোতালেব। ২০১৪ সালের শেষ দিকে তিনি অবসরে চলে যান। সচল থাকার সময় প্রসূতি বিভাগে প্রতি মাসে গড়ে চার-পাঁচজন প্রসূতির অস্ত্রোপচার হতো। ২০১৫ সালে প্রসূতি বিভাগের জরুরি অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে গাইনি বিভাগে পরামর্শক (কনাসালট্যান্ট) হিসেবে চিকিৎসক দেলোয়ারা পারভীন যোগ দেন। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান প্রসূতি বিভাগে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবে অবসরকালীন ছুটি ভোগরত (এলপিআর) চিকিৎসক মোতালেবকে অবেদনবিদ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক রাখা হয়। কোনো প্রসূতির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন দেখা দিলে চিকিৎসক মোতালেবকে ডেকে আনা হতো। আর শল্যচিকিৎসকের কাজ করতেন কনসালট্যান্ট দেলোয়ারা পারভীন।

২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে অবেদনবিদ পদে জেরিন আবদুল্লাহ নামের একজন চিকিৎসক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। কিন্তু তিনি যোগদান করে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান। প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার পর গত বছরের ২৮ জানুয়ারি অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। এরপর থেকে প্রসূতি বিভাগে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ব্যবহার না হওয়ায় অস্ত্রোপচারকক্ষের মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

গত ২৭ অক্টোবর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত একাধিক সদস্য বলেন, হাসপাতালের গাইনি বিভাগ বলতে গেলে অচল। গর্ভবতী নারীরা প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রয়োজনের সময় শল্য সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) এনামুল কবীর সভায় জানান, গাইনি বিভাগের পরামর্শক দেলোয়ারা পারভীন বদলির জন্য ছাড়পত্র নিতে চাইছেন। তখন কমিটির সভাপতি সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান সভায় বলেন, গাইনি বিভাগ খালি করে চিকিৎসককে বদলির ছাড়পত্র দিলে সেবাপ্রত্যাশী নারীদের কী হবে। তিনি বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানিয়ে বলেন, গাইনি বিভাগে একজন চিকিৎসক দেওয়ার ব্যবস্থা করে যেন বর্তমান চিকিৎসককে বদলির ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত ২৬ মাসে জরুরি প্রসূতিসেবা বিভাগে মাত্র একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেটিও সম্ভব হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত একজন অবেদনবিদকে অনুরোধ করে ডেকে আনার পর।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এনামুল কবীরের মুঠোফোনে গত সোমবার সন্ধ্যায় একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আকাইদ প্রথম আলোকে বলেন, গাইনি বিভাগে একজন কনসালট্যান্ট পর্যায়ের শল্যবিদ রয়েছেন। একজন অবেদনবিদ নিয়োগ দেওয়া হলে প্রসূতি বিভাগের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই পদে যোগদান করার পর বিষয়টি জেনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যাটি জানিয়েছেন। ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের পোস্টিং শুরু হলে এ সমস্যা থাকবে না। তখন নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একজন অবেদনবিদ পাওয়া যাবে।