বোনের লাশ চিতায়, ভাই পরীক্ষার হলে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মৃত বোনের মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল নির্মল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তার মুখ দেখা হয়নি। নির্মলের যে জেএসসি পরীক্ষা চলছে। বোনের মুখ দেখতে গেলে তার পরীক্ষা দেওয়া হবে না। উপায়ান্তর না দেখে পরীক্ষার হলে যেতে হয়েছে তাকে। গতকাল বুধবার এ ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়।

নির্মল উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের সনাতন পালের ছেলে। সে উপজেলার স্কুল হাট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বালিয়াডাঙ্গী পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল ছিল হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা।

নির্মলের বোন স্বপ্না রানী (১৬) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল। ১৫ দিন আগে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল ভোরে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সকালে গ্রামে তার মৃতদেহ আনা হয়।

নির্মলের চাচাতো ভাই সুমন পাল জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার সময় পারিবারিক শ্মশানঘাটে স্বপ্না রানীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বপ্নার লাশ যখন চিতায় পুড়ছিল, তখন নির্মল পরীক্ষার হলে ছিল।

নির্মলের বাবা সনাতন পাল জানান, বোনের আদরে বড় হয়েছে নির্মল। স্বপ্না বড্ড ভালোবাসত নির্মলকে। অসুস্থ থাকলেও ভাইয়ের প্রতি আদর একটুও কম ছিল না।

পরীক্ষা শেষে নির্মল পাল জানায়, ‘সকালবেলা খবর পাওয়ার পর বোনের মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার সময় হয়ে যাওয়ায় আর দেখা হয়নি।’

বালিয়াডাঙ্গী পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্র পরিদর্শক ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘বিষয়টি খুব কষ্টের। পরীক্ষা শুরুর আগে বিষয়টি জানতাম না। পরীক্ষা শেষে নির্মলকে সান্ত্বনা দিয়েছি।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, ‘বোনকে আর দেখতে পাবে না, তারপরও অতটুকু ছেলে ধৈর্য ধরে পরীক্ষা দিয়েছে। এটা আমাকে অবাকই করেছে। নির্মল সত্যিই কঠিন সময় পার করেছে।’