দরপত্র না পেয়েও কাজ করছেন যুবলীগ নেতা

নেতা আসাদুন্নবী হীরা এই সড়কটির কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার খারুভাজ গ্রামে তোলা।   ছবি: প্রথম আলো
নেতা আসাদুন্নবী হীরা এই সড়কটির কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার খারুভাজ গ্রামে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের আদিতমারীর একটি কাঁচা সড়কে ইট বিছানোর কাজের দরপত্র পেয়েছে হাতীবান্ধার শাম্মী কনস্ট্রাকশন। তবে এখনো কার্যাদেশ হাতে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সড়কটির কাজ শুরু করে দিয়েছেন আদিতমারী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুন্নবী হিরা (৪০)। লটারিতে বিজয়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে কাজটি বিক্রি করতে চাপ প্রয়োগে এমনটি করছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

শাম্মী কনস্ট্রাকশন ঘটনাটি আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) গত রোববার জানিয়েছে। ইউএনও সোমবার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান মঙ্গলবার রাতে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহকে টেকসইকরণের লক্ষ্যে আদিতমারীতে চারটি পৃথক কাঁচা সড়ক চারটি প্যাকেজের আওতায় ইট বিছানোর (এইচবিবি) প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২৮ অক্টোবর দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ যাচাই–বাছাই শেষে লটারিতে প্যাকেজ নম্বর-১ শাম্মী কনস্ট্রাকশন, প্যাকেজ নম্বর-২ আবু তালেব, প্যাকেজ নম্বর-৩ শাহীন এন্টারপ্রাইজ ও প্যাকেজ নম্বর-৪ নজরুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়। এরপর নিয়ম মেনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ঠিকাদারের নাম চূড়ান্তকরণের জন্য গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় পাঠায়। ঢাকা থেকে ঠিকাদার চূড়ান্তকরণের কার্যাদেশ এখন পর্যন্ত পাঠানো হয়নি।

অন্যদিকে, লটারি ও কার্যাদেশ কিছুই না পেয়েও আদিতমারী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুন্নবী হিরা ওই সড়কের ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এই প্যাকেজের আওতায় সারপুকুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খারুভাজ তেপথি বাজারের নুর ইসলামের বাড়ি থেকে পূর্ব দিকে এগারো মাথাসংলগ্ন দুলাল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার কাঁচা সড়কে ইট বিছানোর কথা। আসাদুন্নবী ইতিমধ্যে কাঁচা রাস্তার উপরিভাগের মাটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে উত্তোলন শুরু করেছেন। এতে সরকারি সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই জনগণের চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।

শাম্মী কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী শাম্মী আখতার বলেন, ‘লটারিতে ১ নম্বর প্যাকেজের রাস্তার কাজটি পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু অফিস থেকে এখনো চিঠি দিয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু জানানো হয়নি। এদিকে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই রাস্তার কাজ শুরু করেছেন যিনি, তাঁর বিষয়ে জানতে পেরেছি। বিষয়টি আদিতমারীর ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, ৫৪ লাখ ২২ হাজার টাকা অর্থ মূল্যের ওই রাস্তাটির এইচবিবি করার জন্য লটারিতে হাতীবান্ধার শাম্মী কনস্ট্রাকশন প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছে। ঢাকা থেকে এখনো কার্যাদেশ আসেনি। তার আগেই আসাদুন্নবী ওই সড়কের কাজ অবৈধভাবে শুরু করে দিয়েছেন।

সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, ইউএনও অফিস থেকে আদেশ পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে এর সঙ্গে আসাদুন্নবীর সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। বিষয়টি থানায় এজাহার হিসেবে মঙ্গলবার রাতে দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে আসাদুন্নবী হিরা প্রথম আলোকে বলেন, লোক মারফত শাম্মী কনস্ট্রাকশনের কাছে কাজটি কিনতে দরদাম নিয়ে কথা হয়েছিল। ওরা দাম বেশি বলায় পরে এ নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি।