পাখিদের বাসা ভাড়ায় বরাদ্দ হবে ৩ লাখ টাকা

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের পাখির দল। ফাইল ছবি
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের পাখির দল। ফাইল ছবি

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানের সেই পাখির বাসার জন্য বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বরাদ্দ চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

এই টাকা আমবাগানের মালিক বা ইজারাদারদের দেওয়া হবে। এতে করে আর কেউ পাখিগুলোকে বাসা থেকে তাড়াতে পারবেন না। যত দিন ইচ্ছা পাখিরা বাসায় থাকবে। আর সরকার থেকে প্রতি বছর এই ব্যয় বহন করা হবে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। গত চার বছর ধরে তারা এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে বাচ্চারা উড়তে শিখলে বাচ্চাদের নিয়ে চলে যায়।

এবার পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনো উড়তে শেখেনি। কিন্তু ইজারাদার এ সময় বাগানের ইজারাদার পরিচর্যা করতে চান। তিনি বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে চান। গত ২৯ অক্টোবর তিনি একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন। স্থানীয় পাখিপ্রেমী কিছু মানুষ তাঁকে বাসা না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে তিনি পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন। ১৫ দিনের মধ্যে বাসা না ছাড়লে পাখিদের বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই দিন রাতেই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেওয়া হলো ১৫ দিন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরের দিন বিষয়টি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এক আদেশে বলেন, কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না। এটিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, এই বিষয় নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা বাগানে গিয়ে জরিপ করে দেখেছেন, ৩৮টি আমগাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছে। তাঁরা এই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করেছেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতির এই পরিমাণ নির্ধারণ করে তাঁরা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত মঙ্গলবার প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। বাগান মালিক বা ইজারাদারেরা টাকা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমানকে পাখিদের দায়দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বাগানে গিয়ে সেই ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি বিভাগ এই দায়িত্ব নিয়েছে। তারা দায়িত্ব না নিলে র‌্যাব এই ক্ষতিপূরণ দিত।