আমদানির নামে ৮৭০ কোটি টাকা পাচার, শুল্ক গোয়েন্দার ১৫ মামলা

অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ভূয়া ঋণপত্র তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানির নামে প্রায় ৮৭০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে ১৫টি মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর রাজধানীর পল্টন থানায় এসব মামলা করেছে ।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি চক্র মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে একটি পণ্যের পরিবর্তে অন্য পণ্য আমদানি করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা, সিএন্ডঅ্যাফ এজেন্ট ও জেটি সরকারদের সহায়তায় এ জালিয়াতি হয়। বিষয়টি অনুসন্ধান করে চক্রের একটি অংশের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। শিগগিরই আরও মামলা হবে।

১৫টি মামলা করেন শুল্ক গোয়েন্দার রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুন নাহার, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিটন চাকমা ও আসমা বেগম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ও মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ১২টি কনটেইনারে পণ্য আমদানিতে মূলধনি যন্ত্রপাতি ঘোষণা দিলেও তাতে পাওয়া যায় সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন, ফটোকপিয়ার মেশিন ও মদ। এ ঘটনায় ২০১৭ সালে মামলা করছিল শুল্ক গোয়েন্দা।

পরে এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, এর আগেও প্রতিষ্ঠান দুটি আরও ১৫টি এলসির বিপরীতে ৭৮ কনটেইনার পণ্য খালাস নেয়। অনুসন্ধানে শুল্ক গোয়েন্দা দেখেছে, আগের আটক করা পণ্যের মতো এই ক্ষেত্রেও একই রপ্তানিকারক, একই দেশ থেকে একই ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি এবং একই সিঅ্যান্ডএফের মাধ্যমে খালাস করা হয়েছে। তাদের অনুসন্ধানে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে, এই ১৫টি ঋণপত্রের মাধ্যমে সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন, ফটোকপিয়ার মেশিন ও মদ আনা হয়। এটি মুদ্রাপাচার, চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক আবদুল মোতালেব ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় নিজের এনআইডির পরিবর্তে খোরশেদ আলম নামে আরেকজনের এনআইডি ব্যবহার করেন। ছবি ব্যবহার করেন নিজের। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় ব্যাংক হিসাব খোলেন। পরে জালিয়াতির মাধ্যমে মুসক নিবন্ধনও নেন। আমদানিকারক হিসেবে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় খালাস করে নেন।

অনুসন্ধানের তথ্যমতে অস্তিত্বহীন দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ঋলপত্র খোলা থেকে শুরু করে পণ্য খালাস পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তার প্রমাণও মিলেছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে মোট ১১ জনকে। সবগুলো মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ও মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপির মালিক আবদুল মোতালেবকে। অন্য আসামিরা হলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাবেয়া অ্যান্ড সন্সের মালিক জালাল উদ্দিন, আইএফআইসি ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখার ব্যবস্থাপক কাজী নওশাদুজ্জামান, আইএফআইসি ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা মেহেদি হাসান, ব্যাংক হিসাব খোলার সময় আবদুল মোতালেবকে খোরশেদ আলম নামে পরিচয়দানকারি শহীদুল আলম, মিরর ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মালিক দিদারুল আলম টিটু এবং ৫ জেটি সরকার আরিফুজ্জামান, রুকনুজ্জামান, এনামুল হক, ফররুখ আহম্মদ ও রওশন আলম।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই এই সিন্ডিকেটের আরও কয়েক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা হবে।