হোলি আর্টিজানে হামলা: আট জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আট জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান।

সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গোলাম ছারোয়ার খান আদালতকে বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই নব্য জেএমবির জঙ্গিরা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি মোট ২২ জন নিহত হন। এই হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অভিযুক্ত আট আসামি জড়িত রয়েছেন। তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন করছি।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর আসামি রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যানের পক্ষে তাঁর আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। আগামী ১৩ নভেম্বর আসামিপক্ষের পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুনানির নতুন দিন ঠিক করেন ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবর রহমান।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে পিপি গোলাম ছারোয়ার খান তিন আসামি হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদের জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতের কাছে তুলে ধরেন।

এরপর গোলাম ছারোয়ার খান আদালতকে বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলায় গ্রেপ্তার আট জঙ্গি প্রত্যেকে নিষিদ্ধ নব্য জেএমবির সদস্য পদ গ্রহণ ও সমর্থন করেন। হামলাকারী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছেন। অভিযুক্ত আট আসামি হামলা করার জন্য সরাসরি প্ররোচনা, বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে আসামিরা সন্ত্রাস বিরোধী আইনে অপরাধ করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে আরও বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য নব্য জেএমবির সদস্যরা হোলি আর্টিজানে ভয়াবহ হামলা চালায়। বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নের জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে। দুই দিনে এই হামলার পরিকল্পনাকারী, হামলার উদ্দেশ্য, হামলায় জড়িতদের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য আদালতে তুলে ধরেন পিপি গোলাম ছারোয়ার খান। আর হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দির গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনান এই সরকারি কৌঁসুলি।
পিপি গোলাম ছারোয়ার আদালতকে বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা করার আগে পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে গাইবান্ধাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে জঙ্গিরা। সর্বশেষ হামলার আগে বসুন্ধরা এলাকায় তারা বাসা ভাড়া নেয়। পাঁচ হামলাকারী সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। হামলা করার আগে হোলি আর্টিজান বেকারি রেকি করে আসে জঙ্গিরা।

জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীর জবানবন্দির তথ্য তুলে ধরে পিপি বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করার এক মাস আগে তিন থেকে চারটি একে-২২ রাইফেল রিপনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। আর মারজান ও ছোট মিজানের মাধ্যমে ভারত থেকে তিন থেকে চারটি ছোট অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে। মারজান তাঁর ভগ্নিপতি হাদিসুর রহমান সাগরের মাধ্যমে অস্ত্র ও বিস্ফোরক বসুন্ধরার বাসায় নিয়ে আসে। আর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় বাশারুজ্জামান চকলেটের বাসায় সোহেল মাহফুজ হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড তৈরি করে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন বসুন্ধরার বাসায় তামিম চৌধুরী হামলাকারীদের নিয়ে মিটিং করে।

অপর আসামি আসলাম হোসেনের জবানবন্দির বক্তব্য তুলে ধরে পিপি আদালতকে আরও বলেন, তামিম চৌধুরীর নির্দেশে বিদেশিদের হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি একাধিকবার হোলি আর্টিজান বেকারি রেকি করেন। ওই বেকারিতে বিদেশিদের আনা-গোনার বিষয়টি তিনি তামিম ও মারজানকে জানান।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকর্মী। হামলার আড়াই বছরের মাথায় গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজানে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার।

হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেপ্তার আট জঙ্গিকে আদালতের এজলাসকক্ষে তোলা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার আট জঙ্গি আসামি হলেন রাশেদ ওরফে র‍্যাশ, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ।