তদবির ও ঠিকাদারির ভাগ নিয়ে ব্যস্ত শ্রমিক লীগের নেতারা

>
  • ২০১২ সালে নেতা-সদস্য ছিলেন ৫ লাখ। এখন নেতাই ৭-৮ লাখ
  •  নেতা হলেই সরকারি অফিস করা লাগে না
  • অবসরের পরও সরকারি গাড়ি, অফিস ব্যবহার
  • শ্রমিক লীগের সিবিএর নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক, বিমা, করপোরেশন ও হাসপাতাল
  • হাট, ঘাট, বালুমহাল, নদীতীর, নৌপথে চাঁদাবাজি ও দখলে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে যাত্রীবাহী ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি রাজশাহী পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার কথা ছিল চালক (লোকোমাস্টার) আসলাম উদ্দিন খানের। কিন্তু তিনি না গিয়ে সহকারী চালক আহসান উদ্দিনকে দিয়ে ট্রেনটি পাঠান। মূল চালক ছাড়াই ১০৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় ট্রেনটি। রেল ব্যবস্থাপনায় এটি গুরুতর অপরাধ। গত ১৩ অক্টোবরের ঘটনা এটি। আসলাম উদ্দিন খান ঈশ্বরদী রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই দাপটে তিনি প্রায়ই এই কাজ করেন বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্র বলছে, সংগঠনের যেসব নেতা রাষ্ট্রায়ত্ত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাঁদের অনেকেই ঠিকমতো অফিস করেন না। তাঁদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি নিয়ে তদবির ও ঠিকাদারি কাজে ভাগ বসানো। অনেকে চাকরি থেকে অবসরে চলে যাওয়ার পরও নেতৃত্বে থেকে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে মূল সংগঠনের নেতাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। জাতীয় ও বেসিক ইউনিয়নগুলোর নেতাদেরও একটা বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন খাতে কাজ করেন। অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা রকম কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিক লীগের অনেক নেতার গাড়ি-বাড়ি-ফ্ল্যাট হয়েছে। অনেকের সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করছেন।

জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ৩৫ সদস্যের। এর মধ্যে ২৭ জনই বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেইনিং এজেন্ট) নেতা। আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদকের বাড়ি মাদারীপুর। শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরেরই আছেন ৯ জন। দুই বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। এরই মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ নেতা চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জনতা ব্যাংকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তিনি ২০১৫ সালে অবসরে গেছেন। কিন্তু এখনো মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ২২ তলায় সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ এমন একটি কক্ষে বসে শ্রমিক লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। শুক্রাবাদে জেনিথ টাওয়ারে নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন। নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য দুটি গাড়ি রয়েছে।

শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। শ্রমিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই জেলার সভাপতির পদও তাঁর দখলে। এর বাইরে তিনি মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নামে একটি সংগঠনেরও সভাপতি। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনের বিরুদ্ধেই টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কমিটি দেওয়ার অভিযোগ আছে।

১ নম্বর সহসভাপতি সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের নিয়ন্ত্রণে পুরো পরিবহন খাত। তিনি নিজে পরিবহনমালিক হয়েও শ্রমিক রাজনীতি করেন। তাঁর সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সারা দেশের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আরেক সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী এবং শিক্ষা ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মচারী ছিলেন। অনেক আগে অবসরে গেছেন। এর পরও সংস্থার দামি দুটি গাড়ি দীর্ঘদিন ব্যবহার করছিলেন তাঁরা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত বছর সেই গাড়ি দুটি উদ্ধার করে। কেন্দ্রীয় শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাউছার আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করে নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম টাঙ্গাইলে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা খরচ করে মসজিদ ও কমপ্লেক্স নির্মাণ করে আলোচিত।

শ্রমিক লীগ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে শ্রমিক লীগের নিবন্ধিত সদস্যসংখ্যা ছিল ৫ লাখ। ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এ সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দেশে শ্রমিক লীগের নেতাই আছেন ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫০ জন। সাধারণ সদস্যের হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। নেতাদের মধ্যে নারী আছেন ৫৬ হাজার ৪৬৬ জন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমিক লীগের আরও অন্তত ২০টি কমিটি রয়েছে। এ ছাড়া কোন্দলের কারণে একই স্থানে একাধিক কমিটিও আছে।

মোটাদাগে শ্রমিক লীগে তিন ধরনের সংগঠন রয়েছে—১. সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ১০ স্তরের কমিটি; ২. সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সিবিএ; ৩. জাতীয় ও বিভিন্ন বেসিক ইউনিয়ন।

শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। ২০০৮ সালে করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থাকতে পারবে না। পরে শ্রমিক লীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেয় আওয়ামী লীগ। তবে দলের নেতারা বলছেন, সংগঠনের নীতিনির্ধারণী সবকিছুই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ঠিক করা হয়।
শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, শ্রমিক লীগে বিএনপি, জামায়াত ও ফ্রিডম পার্টির কিছু লোক অনুপ্রবেশ করে সংগঠনের দুর্নাম করছেন।

ছোট চাকুরের বড় আয়
শ্রমিক লীগের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী পিডিবি থেকে সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে অবসরে যান। শিক্ষা ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন মিয়া একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও এই দুজন সার্বক্ষণিক পিডিবির পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে দুদক তাঁদের কাছ থেকে দুটি গাড়ি উদ্ধার করে। দুদকে পড়া অভিযোগে এ দুজন নেতার অপ্রদর্শিত বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। দুদক তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জনতা ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন। তাঁর নামে করা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের’ উদ্যোগে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নির্মিত হচ্ছে ২০১ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। এই মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে হেলিপ্যাড। মসজিদ ঘিরে কমপ্লেক্স ও নদীতে সেতু নির্মাণেরও পরিকল্পনা আছে। এই মসজিদটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজবিশিষ্ট এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারের মসজিদ বলে প্রচার করা হচ্ছে। এতে খরচ হচ্ছে ২৫০ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জনতা ব্যাংক থেকে ইউনুস বাদল নামের এক গ্রাহকের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সিবিএ নেতার বড় ভূমিকা আছে। রফিকুল ইসলামের মসজিদে অন্যতম দাতা সেই ইউনুস বাদল।

শ্রমিক লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত প্রায় প্রতিটি সিবিএর নেতারই অঢেল সম্পদ। অনেক নেতার বিরুদ্ধেই দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে যেন তাঁরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।
শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেনামি অভিযোগ অনেক আছে। দুদক তদন্তও করছে। কিছুর সত্যতা আছে। আর কিছু অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।

চাঁদাবাজিই মূল লক্ষ্য
শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সহসভাপতি সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি কখনোই শ্রমিক ছিলেন না। তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন পরিবহন কোম্পানি ‘সার্বিক পরিবহন’ ঢাকা থেকে মাদারীপুর ও বরিশালের পথে চলাচল করে। ঢাকায় তাঁদের পারিবারিক পরিবহন কোম্পানির নাম ‘কনক পরিবহন’। তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার মধ্যে লঞ্চ, ইটভাটাসহ আরও অনেক কিছু আছে। শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। এই সংগঠনটি শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সারা দেশে তাঁর সংগঠনের প্রভাবের ফলেই তিনি শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ নিবন্ধিত বাস-ট্রাক ও বাণিজ্যিক যান রয়েছে। এর বাইরে ১০-১২ লাখ অনিবন্ধিত ছোট যানবাহন চলাচল করে। প্রায় ২০ লাখ পরিবহনের শাজাহান খানের ফেডারেশনকে চাঁদা দিয়ে চলতে হয়। বাস-ট্রাক, মিনিবাসসহ বড় যানবাহনের ক্ষেত্রে দৈনিক চাঁদা ১০ টাকা। স্থানীয় পরিবহনের ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ এর চেয়ে কম-বেশি আছে। এই হিসাবে বছরে পরিবহন খাত থেকে শ্রমিক ফেডারেশন ৫০০ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে থাকে।

কাউছার আহমেদ (পলাশ) শ্রমিক লীগের শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতির পদ দখল করে আছেন এক যুগের বেশি সময় ধরে। পোশাক খাতের নিয়ন্ত্রণ পেতে ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সভাপতি হয়েছেন গত জুনে। ফতুল্লায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা, স্টিল মিল, ইট-বালুর ব্যবসা, ট্রাকস্ট্যান্ড, পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে নদীতীরে জাহাজে মাল তোলা ও নামানোর কাজসহ চাঁদাবাজি—সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণে। নদীর তীর ও ওয়াকওয়ে দখলের দায়ে গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

কাউছার আহমেদের স্বীকৃত কোনো পেশা নেই। তবে চলাফেরা করেন দামি পাজেরো গাড়িতে। তাঁর চাঁদাবাজির কারণে ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী সোয়েটার কারখানা পাইওনিয়ার সোয়েটারস লিমিটেড বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কারখানার মালিক পরিস্থিতির নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শ্রম, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে দুই দফা চিঠি দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ী সূত্র বলছে, এই কোম্পানি নারায়ণগঞ্জে আর কারখানা চালু করতে পারেনি। পরে ময়মনসিংহের ভালুকায় কারখানা স্থাপন করে। পরিকল্পিত শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করে চাঁদাবাজির কারণে গত এক দশকে সাত-আটটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।

২০১৭ সালে ছাত্রী ধর্ষণ এবং মা ও মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে আলোচনায় আসেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক তুফান সরকার। খুন, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দখলসহ নানা অপরাধের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছয় বছরে গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

তবে আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে শ্রমিক লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ কম। কেউ কেউ ভুলত্রুটি করতে পারেন। কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। অভিযোগে থাকা কেউ ভবিষ্যতে শ্রমিক লীগে থাকতে পারবেন না।

হাট-ঘাট থেকে ব্যাংক-বিমা সবই নিয়ন্ত্রণে
শ্রমিক লীগের নিয়ন্ত্রণ এখন সর্বত্র। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক, বিমা, করপোরেশন ও হাসপাতাল। এর বাইরে সরকারি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পাটকল, রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, টিঅ্যান্ডটি, সিটি করপোরেশন, রাজউক, ওয়াসা, ডিপিডিসি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চিনিশিল্প, তিতাস গ্যাস, বনশিল্প, আদমজী জুট মিল, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন, বিএডিসি, ডিটিসিএল, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বাপেক্স, বিআরডিবি, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, পল্লী দারিদ্র্যবিমোচন ফাউন্ডেশন, বিসিআইসি, বিমানবন্দর, পেট্রোবাংলা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, স্টিল মিল করপোরেশন।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে নৌকা মাঝি, কুলি-মজুর সমিতি থেকে শুরু করে ট্যানারি, পরিবহন, জাহাজি ফেডারেশন, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, ঘাটশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, দরজিসহ প্রায় সব পেশাতেই শ্রমিক লীগের শাখা রয়েছে।

শ্রমিক-কর্মচারীদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ তাঁদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করার কথা সংগঠনের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে। কিন্তু এসব মৌলিক অধিকার আদায়ে বা সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থে শ্রমিক লীগের কোনো কর্মসূচি বা তৎপরতা চোখে পড়ে না। যা যা হচ্ছে, সবই নেতাদের স্বার্থে। এ জন্যই তর তর করে নেতা বাড়ছে।