কী মাছ নেই পাথারে?

পাথারে মাছ ধরে হাটে নেওয়ার জন্য নৌকা ভিড়িয়েছেন এই জেলে।  ছবি: প্রথম আলো
পাথারে মাছ ধরে হাটে নেওয়ার জন্য নৌকা ভিড়িয়েছেন এই জেলে। ছবি: প্রথম আলো

বাঘাবাড়ী নৌবন্দর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে বড়াল নদের পারের রাউতারা স্লুইসগেট এলাকা থেকে এর শুরু। চলে গেছে বড়াল নদের পাড় বরাবর পশ্চিমে অন্তত ১২ ও উত্তরে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার এই এলাকাটি বর্ষায় পাথার আর শুকনায় বাথান নামে পরিচিত। বর্ষায় বড়াল নদের উপচে পড়া পানিতে চারদিকের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে। শীত এলে পুরোটাই শুকনা জমি। তখন ওই অংশজুড়ে বসে যায় কয়েক শ গরুর বাথান। একেক বাথানে থাকে শতাধিক গরু। বিস্তীর্ণ গোটা এলাকাটাই তখন গোচারণভূমি।

বাথান এলাকার মূল অংশে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারির তিন হাজার একর নিজস্ব জমি। এখন তা ভোগদখল করছে নানাজন। কবিগুরুর এই বাথানের ওপরেই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাঁর নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’–এর ক্যাম্পাস।

পানি এলেই বাথান হয়ে যায় পাথার। পাথারটি দেশি মাছের প্রিয় এক আবাসস্থল। বোয়াল, আইড়, দেশি সরপুঁটি, বাইন, গোনসা, চিতল, ভেউস, রুই, কাতলা—কী থাকে না সেখানে? একবার যিনি এই পাথারের মাছ খেয়েছেন, দীর্ঘদিন তিনি ভুলতে পারেন না এর স্বাদ।

এই মাছ বর্ষায় তেমন ধরা পড়ে না। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেলেদের জালে ব্যাপকভাবে ধরা পড়ে মাছ। পাথারের মাছ বিক্রি হয় রাউতারা স্লুইসগেট নামে পরিচিত কিছুটা দুর্গম এক এলাকায়। তাতে পরোয়া নেই মাছপ্রিয় ভোজনরসিক মানুষের। নৌকা, মোটরসাইকেলে নদী ও ভাঙাচোরা রাস্তা পার হয়ে তাঁরা ঠিকই পৌঁছে যান সেখানে।

পাথারের মাছ কিনতে হয় রীতিমতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় ‘ডাক’। পাথার থেকে তাজা ও টাটকা মাছ নিয়ে জেলেরা ওই হাটে আসামাত্রই হাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির মধ্যস্থতায় শুরু হয় নিলাম। প্রতিযোগী বেশি হলে মাছের দাম উঠে যায় অনেক। তখন লাভ হয় জেলের। আর প্রতিযোগী কম হলে দাম তেমন ওঠে না। তখন লাভ হয় ক্রেতার।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই হাটে মাছ কেনাবেচা চলে। হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এই হাট চলছে। নদী ও পাথারে যে পরিমাণ পানি আছে, তাতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত হয়তো এই হাট চলবে। পাথারের বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরার পর দুই শরও বেশি জেলে এখানে মাছ বেচতে আসেন।