সুনামগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা গাড়ি চলেনি

জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো গাড়ি। সুনামগঞ্জ। ছবি: প্রথম আলো
জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো গাড়ি। সুনামগঞ্জ। ছবি: প্রথম আলো

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের দাবিতে সুনামগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকেরা আজ মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা কর্মবিরতি পালন করেছেন। এ কারণে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক এবং জেলার অভ্যন্তরে বাস, মিনিবাস, মাইক্রো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা চলাচল করেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

কোনো ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে কর্মবিরতির নামে এই যাত্রীভোগান্তি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলার সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় জরুরি কাজেও মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পারেননি। সুনামগঞ্জ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাসও।

সকালে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট যাবেন বলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম শহরের বাস টার্মিনালে আসেন। এসে দেখেন কোনো বাস চলছে না। শ্রমিকেরা জানায়, কর্মবিরতি চলছে। সন্ধ্যার আগে কোনো বাস ছাড়বে না। জরুরি কাজ থাকায় এরপর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সিলেট যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু অটোরিকশাও চলেনি।

আমিনুল ইসলাম বলেন,‘কোনো কথা নেই, বার্তা নেই পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মানুষকে হয়রানি করছেন শ্রমিকেরা। আগে ঘোষণা দিলে তো মানুষ একটা বিকল্প চিন্তা করে রাখতে পারে।’

বাস টার্মিনালে কথা হয় সদর উপজেলার ইনাতনগর গ্রামের বাসিন্দা মফচ্ছির আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন,‘কি কারণে এরা বাস বন্ধ করছে সেটাই তো ভালোভাবে বলতে পারছে না। সমস্যা যদি সারা দেশের হয় তাহলে শুধু সুনামগঞ্জে কেন ধর্মঘট। আসলে এরা বাড়াবাড়ি করছে।’

বাস টার্মিনালের পাশেই শহরের সুরমা সেতুর ওপর থেকে জেলার জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। কিন্তু আজ এখানে কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিল না। শহরের নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা নির্মল রায় প্রতিদিন শহর থেকে জামালগঞ্জ গিয়ে অফিস করেন। সকালে এসে শোনেন অটোরিকশাও চলবে না। পরে বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করে তিনি জামালগঞ্জে যান। এমনিভাবে দিনভর মানুষজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জেলার উপজেলাগুলোতেও এসব যানবাহন চলেনি।

সুনামগঞ্জ শহরের একজন পরিবহন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেলা শহরে থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যে বাস চলে এসব বাসের শ্রমিকেরা এই আন্দোলনে নেই। কিন্তু ভয়ে কোনো বাস ছাড়েননি তারা। বিষয়টি গতকাল সোমবার রাতেও তাদের জানানো হয়নি। যাত্রীরা সকালে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যাবেন বলে টিকিট নিয়েছেন। আজ সকালে যখন বাস ছাড়বেন তখন শোনেন শ্রমিকেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। বাস চলবে না।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সেজাউল করিম বলেন, কোনো সংগঠন নয়, জেলার সব সাধারণ পরিবহন শ্রমিকেরা এই কর্মবিরতি পালন করেছেন। পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে এই কর্মবিরতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া জানালেন, কোনো একক শ্রমিক সংগঠন এই কর্মবিরতির ডাক দেয়নি। সাধারণ শ্রমিকেরা পরিবহন মালিক সংগঠনকে জানিয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধনের দাবিতে তারা এই কর্মবিরতি করছে। আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া না হলে আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছে।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছেন, সকালে বিষয়টি জানতে পেরে কোথাও যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল।