মা-বাবা হারানো শাহিদাসহ তিনজন ঢামেকে

শাহিদা আক্তার, মুন্না মিয়া, মির্জা সাইফুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
শাহিদা আক্তার, মুন্না মিয়া, মির্জা সাইফুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুই তরুণ সেখানে ভর্তি আছেন। অন্যজন তরুণী। তাঁকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ঢামেকে আনা তিনজন হলেন হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মুন্না মিয়া (২০), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মির্জা সাইফুদ্দিন ওরফে সৈকত (২৮) ও মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাহিদা আক্তার ওরফে সুমি (২১)। এই দুর্ঘটনায় সোমার মা জাহেদা বেগম (৪৫) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শাহিদার নানি, এক ভাই ও এক বোন। গত বৃহস্পতিবার আরেকটি দুর্ঘটনায় শাহিদার বাবা মারা গিয়েছিলেন

ঢামেকের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কসবার ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে এখানে আনা হয়েছে। দুজন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে সাইফুদ্দিনের মাথায় জখম। মুন্নার ডান পা ভাঙা। আর শাহিদাকে আগেই পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মাথায় গুরুতর কোনো আঘাত আছে কি না, তা জানতে তাঁকে ঢামেকে আনা হয়। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে পঙ্গুতে ফেরত নেওয়া হয়েছে।

আহত মুন্নার চাচা মো. ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ভাতিজা পেশায় গ্রিল মিস্ত্রি। মুন্না হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ওমর আলী ছেলে। তাঁর বরাত দিয়ে ফিরোজ বলেন, বিকট শব্দে মুন্নার ঘুম ভাঙে। ততক্ষণে দেখেন তাঁর সারা শরীরে জখম। এর বেশ কিছুক্ষণ পর লোকজনের সহযোগিতায় কোনো রকমে সেখান থেকে বের হন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল নেয়। সেখান থেকে দুপুরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ফিরোজ জানান, মুন্না তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলেন।

আহত মির্জা সাইফুদ্দিনের ভাই সাকিব বলেন, গত রোববার চাকরির খোঁজে সাইফুদ্দিন সিলেটে এক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশে আসার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তাঁদের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। তাঁদের বাবার নাম শহিদুল্লাহ। কসবার স্থানীয় হাসপাতাল থেকে বিকেলে তাঁকে ঢামেকে আনা হয়। তাঁর ভাই মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন।

শাহিদার খালা রেহানা বেগম বলেন, শাহিদা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গাজীপুর গ্রামের মৃত মুসলিম মিয়ার মেয়ে। মুসলিম মিয়া গত বৃহস্পতিবার মারা গিয়েছিলেন। শাহিদার বাবা পরিবার নিয়ে গত ৩০ বছর ধরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। বাবার মৃত্যুর কারণে তাঁরা গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। তিনি জানান, সপরিবারে (৬ সদস্য) শাহিদারা শ্রীমঙ্গল থেকে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। শাহিদার মা জাহেদা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্যদের মধ্যে চারজন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শাহিদার আরেকটি ভাই ঘটনার সময় অন্য বগিতে থাকায় সে আহত হয়নি। রেহানা বেগম জানান, শাহিদা চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হন। আগামী বছর ওই বিষয়ে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার কথা। তাঁর ভাষ্য, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই জাহেদা বেগম সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন।